Sunday, April 17, 2016

অপটু - যতবার আজ গাঁথনু মালা পড়ল খসে খসে ---

অপটু
- ক্ষণিকা
-
যতবার আজ গাঁথনু মালা
পড়ল খসে খসে
কী জানি কার দোষে!
তুমি হোথায় চোখের কোণে
দেখছ বসে বসে।
চোখ-দুটিরে প্রিয়ে,
শুধাও শপথ নিয়ে
আঙুল আমার আকুল হল
কাহার দৃষ্টিদোষে!
আজ যে বসে গান শোনাব
কথাই নাহি জোটে,
কণ্ঠ নাহি ফোটে।
মধুর হাসি খেলে তোমার
চতুর রাঙা ঠোঁটে।
কেন এমন ত্রুটি
বলুক আঁখি-দুটি--
কেন আমার রুদ্ধ কণ্ঠে
কথাই নাহি ফোটে!
রেখে দিলাম মাল্য বীণা,
সন্ধ্যা হয়ে আসে।
ছুটি দাও এ দাসে--
সকল কথা বন্ধ করে
বসি পায়ের পাশে।
নীরব ওষ্ঠ দিয়ে
পারব যে কাজ প্রিয়ে
এমন কোনো কর্ম দেহো
অকর্মণ্য দাসে।

বিদায় - তোমরা নিশি যাপন করো, এখনো রাত রয়েছে ভাই,

বিদায়
- ক্ষণিকা
-
তোমরা নিশি যাপন করো,
এখনো রাত রয়েছে ভাই,
আমায় কিন্তু বিদায় দেহো--
ঘুমোতে যাই, ঘুমোতে যাই।
মাথার দিব্য, উঠো না কেউ
আগ বাড়িয়ে দিতে আমায়--
চলছে যেমন চলুক তেমন,
হঠাৎ যেন গান না থামায়।
আমার যন্ত্রে একটি তন্ত্রী
একটু যেন বিকল বাজে,
মনের মধ্যে শুনছি যেটা
হাতে সেটা আসছে না যে।
একেবারে থামার আগে
সময় রেখে থামতে যে চাই--
আজকে কিছু শ্রান্ত আছি,
ঘুমোতে যাই, ঘুমোতে যাই।
আঁধার-আলোয় সাদায়-কালোয়
দিনটা ভালোই গেছে কাটি,
তাহার জন্যে কারো সঙ্গে
নাইকো কোনো ঝগড়াঝাঁটি।
মাঝে মাঝে ভেবেছিলুম
একটু-আধটু এটা-ওটা
বদল যদি পারত হতে
থাকত নাকো কোনো খোঁটা।
বদল হলে কখন মনটা
হয়ে পড়ত ব্যতিব্যস্ত,
এখন যেমন আছে আমার
সেইটে আবার চেয়ে বসত।
তাই ভেবেছি দিনটা আমার
ভালোই গেছে কিছু না চাই--
আজকে শুধু শ্রান্ত আছি,
ঘুমোতে যাই, ঘুমোতে যাই।

কবির বয়স - ওরে কবি, সন্ধ্যা হয়ে এল, কেশে তোমার ধরেছে যে পাক।

কবির বয়স
- ক্ষণিকা
-
ওরে কবি, সন্ধ্যা হয়ে এল,
কেশে তোমার ধরেছে যে পাক।
বসে বসে ঊর্ধ্বপানে চেয়ে
শুনতেছ কি পরকালের ডাক?
কবি কহে,"সন্ধ্যা হল বটে,
শুনছি বসে লয়ে শ্রান্ত দেহ,
এ পারে ওই পল্লী হতে যদি
আজো হঠাৎ ডাকে আমায় কেহ।
যদি হোথায় বকুলবনচ্ছায়ে
মিলন ঘটে তরুণ-তরুণীতে,
দুটি আঁখির 'পরে দুইটি আঁখি
মিলিতে চায় দুরন্ত সংগীতে--
কে তাহাদের মনের কথা লয়ে
বীণার তারে তুলবে
প্রতিধ্বনি,
                  আমি যদি ভবের কূলে বসে
পরকালের ভালো মন্দই গনি।
"সন্ধ্যাতারা উঠে অস্তে গেল,
চিতা নিবে এল নদীর ধারে,
কৃষ্ণপক্ষে হলুদবর্ণ চাঁদ
দেখা দিল বনের একটি পারে,
শৃগালসভা ডাকে ঊর্ধ্বরবে
পোড়ো বাড়ির শূন্য আঙিনাতে--
এমন কালে কোনো গৃহত্যাগী
হেথায় যদি জাগতে আসে রাতে,
জোড়-হস্তে ঊর্ধ্বে তুলি মাথা
চেয়ে দেখে সপ্ত ঋষির পানে,
প্রাণের কূলে আঘাত করে ধীরে
সুপ্তিসাগর শব্দবিহীন গানে--
ত্রিভুবনের গোপন কথাখানি
কে জাগিয়ে তুলবে তাহার মনে
আমি যদি আমার মুক্তি নিয়ে
যুক্তি করি আপন গৃহকোণে?
"কেশে আমার পাক ধরেছে বটে,
তাহার পানে নজর এত কেন?
পাড়ায় যত ছেলে এবং বুড়ো
সবার আমি একবয়সী জেনো।
ওষ্ঠে কারো সরল সাদা হাসি
কারো হাসি আঁখির কোণে কোণে
কারো অশ্রু উছলে পড়ে যায়
কারো অশ্রু শুকায় মনে মনে,
কেউ বা থাকে ঘরের কোণে দোঁহে
জগৎ মাঝে কেউ বা হাঁকায় রথ,
কেউ বা মরে একলা ঘরের শোকে
জনারণ্যে কেউ বা হারায় পথ।
সবাই মোরে করেন ডাকাডাকি,
কখন শুনি পরকালের ডাক?
সবার আমি সমান-বয়সী যে
চুলে আমার যত ধরুক পাক।'

তথাপি - তুমি যদি আমায় ভালো না বাস রাগ করি যে এমন আমার সাধ্য নাই--

তথাপি
- ক্ষণিকা
-
তুমি যদি আমায় ভালো না বাস
রাগ করি যে এমন আমার সাধ্য নাই--
এমন কথার দেব নাকো আভাসও,
আমারো মন তোমার পায়ে বাধ্য নাই।
নাইকো আমার কোনো গরব-গরিমা--
যেমন করেই কর আমায় বঞ্চিত
তুমি না রও তোমার সোনার প্রতিমা
রবে আমার মনের মধ্যে সঞ্চিত।
কিন্তু তবু তুমিই থাকো, সমস্যা যাক ঘুচি।
স্মৃতির চেয়ে আসলটিতেই আমার অভিরুচি।
দৈবে স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া শক্ত নয়
সেটা কিন্তু বলে রাখাই সংগত।
তাহা ছাড়া যারা তোমার ভক্ত নয়
নিন্দা তারা করতে পারে অন্তত।
তাহা ছাড়া চিরদিন কি কষ্টে যায়?
আমারো এই অশ্রু হবে মার্জনা।
ভাগ্যে যদি একটি কেহ নষ্টে যায়
সান্ত্বনার্থে হয়তো পাব চার জনা।
কিন্তু তবু তুমিই থাকো, সমস্যা যাক ঘুচি।
চারের চেয়ে একের 'পরেই আমার অভিরুচি।

অচেনা - কেউ যে কারে চিনি নাকো সেটা মস্ত বাঁচন।

অচেনা
- ক্ষণিকা
-
কেউ যে কারে চিনি নাকো
সেটা মস্ত বাঁচন।
তা না হলে নাচিয়ে দিত
বিষম তুর্কি-নাচন।
বুকের মধ্যে মনটা থাকে,
মনের মধ্যে চিন্তা--
সেইখানেতেই নিজের ডিমে
সদাই তিনি দিন তা।
বাইরে যা পাই সম্জে নেব
তারি আইন-কানুন,
অন্তরেতে যা আছে তা
অন্তর্যামীই জানুন।
চাই নে রে, মন চাই নে।
মুখের মধ্যে যেটুকু পাই
যে হাসি আর যে কথাটাই
যে কলা আর যে ছলনাই
তাই নে রে মন, তাই নে।
বাইরে থাকুক মধুর মূর্তি,
সুধামুখের হাস্য,
তরল চোখে সরল দৃষ্টি--
করব না তার ভাষ্য।
বাহু যদি তেমন করে
জড়ায় বাহুবন্ধ
আমি দুটি চক্ষু মুদে
রইব হয়ে অন্ধ--
কে যাবে ভাই, মনের মধ্যে
মনের কথা ধরতে?
কীটের খোঁজে কে দেবে হাত
কেউটে সাপের গর্তে?
চাই নে রে, মন চাই নে।
মুখের মধ্যে যেটুকু পাই
যে হাসি আর যে কথাটাই
যে কলা আর যে ছলনাই
তাই নে রে মন, তাই নে।
মন নিয়ে কেউ বাঁচে নাকো,
মন বলে যা পায় রে
কোনো জন্মে মন সেটা নয়
জানে না কেউ হায় রে।
ওটা কেবল কথার কথা,
মন কি কেহ চিনিস?
আছে কারো আপন হাতে
মন ব'লে এক জিনিস?
চলেন তিনি গোপন চালে,
স্বাধীন তাঁহার ইচ্ছে--
কেই বা তাঁরে দিচ্ছে এবং
কেই বা তাঁরে নিচ্ছে!
চাই নে রে, মন চাই নে।
মুখের মধ্যে যেটুকু পাই
যে হাসি আর যে কথাটাই
যে কলা আর যে ছলনাই
তাই নে রে মন, তাই নে।

বোঝাপড়া - মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।

বোঝাপড়া
- ক্ষণিকা
-
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
কেউ বা তোমায় ভালোবাসে
কেউ বা বাসতে পারে না যে,
কেউ বিকিয়ে আছে, কেউ বা
সিকি পয়সা ধারে না যে,
কতকটা যে স্বভাব তাদের
কতকটা বা তোমারো ভাই,
কতকটা এ ভবের গতিক--
সবার তরে নহে সবাই।
তোমায় কতক ফাঁকি দেবে
তুমিও কতক দেবে ফাঁকি,
তোমার ভোগে কতক পড়বে
পরের ভোগে থাকবে বাকি,
মান্ধাতারই আমল থেকে
চলে আসছে এমনি রকম--
তোমারি কি এমন ভাগ্য
বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি
এলে সুখের বন্দরেতে,
জলের তলে পাহাড় ছিল
লাগল বুকের অন্দরেতে,
মুহূর্তেকে পাঁজরগুলো
উঠল কেঁপে আর্তরবে--
তাই নিয়ে কি সবার সঙ্গে
ঝগড়া করে মরতে হবে?
ভেসে থাকতে পার যদি
সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়,
না পার তো বিনা বাক্যে
টুপ করিয়া ডুবে যেয়ো।
এটা কিছু অপূর্ব নয়,
ঘটনা সামান্য খুবই--
শঙ্কা যেথায় করে না কেউ
সেইখানে হয় জাহাজ-ডুবি।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
তোমার মাপে হয় নি সবাই
তুমিও হও নি সবার মাপে,
তুমি মর কারো ঠেলায়
কেউ বা মরে তোমার চাপে--
তবু ভেবে দেখতে গেলে
এমনি কিসের টানাটানি?
তেমন করে হাত বাড়ালে
সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।
আকাশ তবু সুনীল থাকে,
মধুর ঠেকে ভোরের আলো,
মরণ এলে হঠাৎ দেখি
মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো।
যাহার লাগি চক্ষু বুজে
বহিয়ে দিলাম অশ্রুসাগর
তাহারে বাদ দিয়েও দেখি
বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
নিজের ছায়া মস্ত করে
অস্তাচলে বসে বসে
আঁধার করে তোল যদি
জীবনখানা নিজের দোষে,
বিধির সঙ্গে বিবাদ করে
নিজের পায়েই কুড়ুল মার,
দোহাই তবে এ কার্যটা
যত শীঘ্র পার সারো।
খুব খানিকটে কেঁদে কেটে
অশ্রু ঢেলে ঘড়া ঘড়া
মনের সঙ্গে এক রকমে
করে নে ভাই, বোঝাপড়া।
তাহার পরে আঁধার ঘরে
প্রদীপখানি জ্বালিয়ে তোলো--
ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে
কতটুকুন তফাত হল।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।

শাস্ত্র - পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে এমন কথা শাস্ত্রে বলে,

শাস্ত্র
- ক্ষণিকা
-
পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে
এমন কথা শাস্ত্রে বলে,
আমরা বলি বানপ্রস্থ
যৌবনেতেই ভালো চলে।
বনে এত বকুল ফোটে,
গেয়ে মরে কোকিল পাখি,
লতাপাতার অন্তরালে
বড়ো সরস ঢাকাঢাকি।
চাঁপার শাখে চাঁদের আলো,
সে সৃষ্টি কি কেবল মিছে?
এ-সব যারা বোঝে তারা
পঞ্চাশতের অনেক নীচে।
পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে
এমন কথা শাস্ত্রে বলে,
আমরা বলি বানপ্রস্থ
যৌবনেতেই ভালো চলে।
ঘরের মধ্যে বকাবকি,
নানান মুখে নানা কথা।
হাজার লোকে নজর পাড়ে,
একটুকু নাই বিরলতা।
সময় অল্প, ফুরায় তাও
অরসিকের আনাগোনায়--
ঘণ্টা ধরে থাকেন তিনি
সৎপ্রসঙ্গ-আলোচনায়।
হতভাগ্য নবীন যুবা
কাছেই থাকে বনের খোঁজে,
ঘরের মধ্যে মুক্তি যে নেই
এ কথা সে বিশেষ বোঝে।
পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে
এমন কথা শাস্ত্রে বলে,
আমরা বলি বানপ্রস্থ
যৌবনেতেই ভালো চলে।
আমরা সবাই নব্যকালের
সভ্য যুবা অনাচারী,
মনুর শাস্ত্র শুধরে দিয়ে
নতুন বিধি করব জারি--
বুড়ো থাকুন ঘরের কোণে,
পয়সাকড়ি করুন জমা,
দেখুন বসে বিষয়-পত্র,
চালান মামলা-মকদ্দমা,
ফাগুন-মাসে লগ্ন দেখে
যুবারা যাক বনের পথে,
রাত্রি জেগে সাধ্যসাধন
থাকুক রত কঠিন ব্রতে ।
পঞ্চাশোর্ধ্বে বনে যাবে
এমন কথা শাস্ত্রে বলে,
আমরা বলি বানপ্রস্থ
যৌবনেতেই ভালো চলে।

অনবসর - ছেড়ে গেলে হে চঞ্চলা, হে পুরাতন সহচরী !

অনবসর
- ক্ষণিকা
-
ছেড়ে গেলে হে চঞ্চলা,
হে পুরাতন সহচরী!
ইচ্ছা বটে বছর কতক
তোমার জন্য বিলাপ করি,
সোনার স্মৃতি গড়িয়ে তোমার
বসিয়ে রাখি চিত্ততলে,
একলা ঘরে সাজাই তোমায়
মাল্য গেঁথে অশ্রুজলে--
নিদেন কাঁদি মাসেকখানেক
তোমায় চির-আপন জেনেই--
হায় রে আমার হতভাগ্য!
সময় যে নেই, সময় যে নেই।
বর্ষে বর্ষে বয়স কাটে,
বসন্ত যায় কথায় কথায়,
বকুলগুলো দেখতে দেখতে
ঝ'রে পড়ে যথায় তথায়,
মাসের মধ্যে বারেক এসে
অস্তে পালায় পূর্ণ-ইন্দু,
শাস্ত্রে শাসায় জীবন শুধু
পদ্মপত্রে শিশিরবিন্দু--
তাঁদের পানে তাকাব না
তোমায় শুধু আপন জেনেই
সেটা বড়োই বর্বরতা--
সময় যে নেই, সময় যে নেই ।
এসো আমার শ্রাবণ-নিশি,
এসো আমার শরৎলক্ষ্ণী,
এসো আমার বসন্তদিন
লয়ে তোমার পুষ্পপক্ষী,
তুমি এসো, তুমিও এসো,
তুমি এসো, এবং তুমি,
প্রিয়ে, তোমরা সবাই জান
ধরণীর নাম মর্তভূমি--
যে যায় চলে বিরাগভরে
তারেই শুধু আপন জেনেই
বিলাপ করে কাটাই, এমন
সময় যে নেই, সময় যে নেই।
ইচ্ছে করে বসে বসে
পদ্যে লিখি গৃহকোণায়
"তুমিই আছ জগৎ জুড়ে'--
সেটা কিন্তু মিথ্যে শোনায়।
ইচ্ছে করে কোনোমতেই
সান্ত্বনা আর মান্ব না রে,
এমন সময় নতুন আঁখি
তাকায় আমার গৃহদ্বারে--
চক্ষু মুছে দুয়ার খুলি
তারেই শুধু আপন জেনেই,
কখন তবে বিলাপ করি?
সময় যে নেই, সময় যে নেই।

অতিবাদ - আজ বসন্তে বিশ্বখাতায় হিসেব নেইকো পুষ্পে পাতায়,

অতিবাদ
- ক্ষণিকা
-
আজ বসন্তে বিশ্বখাতায়
হিসেব নেইকো পুষ্পে পাতায়,
জগৎ যেন ঝোঁকের মাথায়
সকল কথাই বাড়িয়ে বলে।
ভুলিয়ে দিয়ে সত্যি মিথ্যে,
ঘুলিয়ে দিয়ে নিত্যানিত্যে,
দু ধারে সব উদারচিত্তে
বিধিবিধান ছাড়িয়ে চলে।
আমারো দ্বার মুক্ত পেয়ে
সাধুবুদ্ধি বহির্গতা,
আজকে আমি কোনোমতেই
বলব নাকো সত্য কথা।
প্রিয়ার পুণ্যে হলেম রে আজ
একটা রাতের রাজ্যাধিরাজ,
ভাণ্ডারে আজ করছে বিরাজ
সকল প্রকার অজস্রত্ব।
কেন রাখব কথার ওজন?
কৃপণতায় কোন্ প্রয়োজন?
ছুটুক বাণী যোজন যোজন
উড়িয়ে দিয়ে ষত্ব ণত্ব।
চিত্তদুয়ার মুক্ত ক'রে
সাধুবুদ্ধি বহির্গতা,
আজকে আমি কোনোমতেই
বলব নাকো সত্য কথা।
হে প্রেয়সী স্বর্গদূতী,
আমার যত কাব্যপুঁথি
তোমার পায়ে পড়ে স্তুতি,
তোমারি নাম বেড়ায় রটি;
থাকো হৃদয়-পদ্মটিতে
এক দেবতা আমার চিতে--
চাই নে তোমায় খবর দিতে
আরো আছেন তিরিশ কোটি।
চিত্তদুয়ার মুক্ত ক'রে
সাধুবুদ্ধি বহির্গতা,
আজকে আমি কোনোমতেই
বলব নাকো সত্য কথা।
ত্রিভুবনে সবার বাড়া
একলা তুমি সুধার ধারা,
উষার ভালে একটি তারা,
এ জীবনে একটি আলো--
সন্ধ্যাতারা ছিলেন কে কে
সে-সব কথা যাব ঢেকে,
সময় বুঝে মানুষ দেখে
তুচ্ছ কথা ভোলাই ভালো।
চিত্তদুয়ার মুক্ত রেখে
সাধুবুদ্ধি বহির্গতা,
আজকে আমি কোনোমতেই
বলব নাকো সত্য কথা।
সত্য থাকুন ধরিত্রীতে
শুষ্ক রুক্ষ ঋষির চিতে,
জ্যামিতি আর বীজগণিতে,
কারো ইথে আপত্তি নেই--
কিন্তু আমার প্রিয়ার কানে
এবং আমার কবির গানে
পঞ্চশরের পুষ্পবাণে
মিথ্যে থাকুন রাত্রিদিনেই।
চিত্তদুয়ার মুক্ত রেখে
সাধুবুদ্ধি বহির্গতা,
আজকে আমি কোনোমতেই
বলব নাকো সত্য কথা।
ওগো সত্য বেঁটেখাটো,
বীণার তন্ত্রী যতই ছাঁটো,
কণ্ঠ আমার যতই আঁটো,
বলব তবু উচ্চ সুরে--
আমার প্রিয়ার মুগ্ধ দৃষ্টি
করছে ভুবন নূতন সৃষ্টি,
মুচকি হাসির সুধার বৃষ্টি
চলছে আজি জগৎ জুড়ে।
চিত্তদুয়ার মুক্ত রেখে
সাধুবুদ্ধি বহির্গতা,
আজকে আমি কোনোমতেই
বলব নাকো সত্য কথা।
যদি বল "আর বছরে
এই কথাটাই এমনি করে
বলেছিলি, কিন্তু ওরে
শুনেছিলেন আরেক জনে'--
জেনো তবে মূঢ়মত্ত,
আর বসন্তে সেটাই সত্য,
এবারো সেই প্রাচীন তত্ত্ব
ফুটল নূতন চোখের কোণে।
চিত্তদুয়ার মুক্ত রেখে
সাধুবুদ্ধি বহির্গতা,
আজকে আমি কোনোমতেই
বলব নাকো সত্য কথা।
আজ বসন্তে বকুল ফুলে
যে গান বায়ু বেড়ায় বুলে
কাল সকালে যাবে ভুলে--
কোথায় বাতাস, কোথায় সে ফুল!
হে সুন্দরী, তেমনি কবে
এ-সব কথা ভুলব যবে
মনে রেখো আমায় তবে--
ক্ষমা কোরো আমার সে ভুল।
চিত্তদুয়ার মুক্ত রেখে
সাধুবুদ্ধি বহির্গতা,
আজকে আমি কোনোমতেই
বলব নাকো সত্য কথা।

যথাস্থান - কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস ওরে আমার গান,

যথাস্থান
- ক্ষণিকা
-
কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস
ওরে আমার গান,
কোন্খানে তোর স্থান?
পন্ডিতেরা থাকেন যেথায়
বিদ্যেরত্ন-পাড়ায়--
নস্য উড়ে আকাশ জুড়ে
কাহার সাধ্য দাঁড়ায়,
চলছে সেথায় সূক্ষ্ণ তর্ক
সদাই দিবারাত্র
"পাত্রাধার কি তৈল কিম্বা
তৈলাধার কি পাত্র'।
পুঁথিপত্র মেলাই আছে
মোহধ্বান্তনাশন,
তারি মধ্যে একটি প্রান্তে
পেতে চাস কি আসন?
গান তা শুনি গুঞ্জরিয়া
গুঞ্জরিয়া কহে--
নহে নহে নহে।
কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস
ওরে আমার গান,
কোন্ দিকে তোর টান?
পাষাণ-গাঁথা প্রাসাদ-'পরে
আছেন ভাগ্যবন্ত,
মেহাগিনির মঞ্চ জুড়ি
পঞ্চ হাজার গ্রন্থ--
সোনার জলে দাগ পড়ে না,
খোলে না কেউ পাতা,
অ-স্বাদিতমধু যেমন
যূথী অনাঘ্রাতা।
ভৃত্য নিত্য ধুলা ঝাড়ে
যত্ন পুরা মাত্রা,
ওরে আমার ছন্দোময়ী,
সেথায় করবি যাত্রা?
গান তা শুনি কর্ণমূলে
মর্মরিয়া কহে--
নহে নহে নহে।
কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস
ওরে আমার গান,
কোথায় পাবি মান?
নবীন ছাত্র ঝুঁকে আছে
এক্জামিনের পড়ায়,
মনটা কিন্তু কোথা থেকে
কোন্ দিকে যে গড়ায়,
অপাঠ্য সব পাঠ্য কেতাব
সামনে আছে খোলা,
কর্তৃজনের ভয়ে কাব্য
কুলুন্গিতে তোলা--
সেইখানেতে ছেঁড়াছড়া
এলোমোলোর মেলা,
তারি মধ্যে ওরে চপল,
করবি কি তুই খেলা?
গান তা শুনে মৌনমুখে
রহে দ্বিধার ভরে--
যাব-যাব করে।
কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস
ওরে আমার গান,
কোথায় পাবি ত্রাণ?
ভান্ডারেতে লক্ষ্মী বধূ
যেথায় আছে কাজে,
ঘরে ধায় সে ছুটি পায় সে
যখন মাঝে মাঝে,
বালিশ-তলে বইটি চাপা
টানিয়া লয় তারে,
পাতাগুলিন ছেঁড়াখোঁড়া
শিশুর অত্যাচারে--
কাজল-আঁকা সিঁদুরমাখা
চুলের-গন্ধে-ভরা
শয্যাপ্রান্তে ছিন্ন বেশে
চাস কি যেতে ত্বরা?
বুকের 'পরে নিশ্বসিয়া
স্তব্ধ রহে গান--
লোভে কম্পমান।
কোন্ হাটে তুই বিকোতে চাস
ওরে আমার গান,
কোথায় পাবি প্রাণ?
যেথায় সুখে তরুণ যুগল
পাগল হয়ে বেড়ায়,
আড়াল বুঝে আঁধার খুঁজে
সবার আঁখি এড়ায়,
পাখি তোদের শোনায় গীতি,
নদী শোনায় গাথা,
কত রকম ছন্দ শোনায়
পুষ্প লতা পাতা--
সেইখানেতে সরল হাসি
সজল চোখের কাছে
বিশ্ববাঁশির ধ্বনির মাঝে
যেতে কি সাধ আছে?
হঠাৎ উঠে উচ্ছ্বসিয়া
কহে আমার গান--
সেইখানে মোর স্থান।

যুগল - ঠাকুর, তব পায়ে নমোনমঃ, পাপিষ্ঠ এই অক্ষমেরে ক্ষম,

যুগল
- ক্ষণিকা
-
ঠাকুর, তব পায়ে নমোনমঃ,
পাপিষ্ঠ এই অক্ষমেরে ক্ষম,
আজ বসন্তে বিনয় রাখো মম
বন্ধ করো শ্রীমদ্ভাগবত।
শাস্ত্র যদি নেহাত পড়তে হবে
গীত-গোবিন্দ খোলা হোক-না তবে।
শপথ মম, বোলো না এই ভবে
জীবনখানা শুধুই স্বপ্নবৎ।
একটা দিনের সন্ধি করিয়াছি,
বন্ধ আছে যমরাজের সমর--
আজকে শুধু এক বেলারই তরে
আমরা দোঁহে অমর দোঁহে অমর।
স্বয়ং যদি আসেন আজি দ্বারে
মান্ব নাকো রাজার দারোগারে--
কেল্লা হতে ফৌজ সারে সারে
দাঁড়ায় যদি, ওঁচায় ছোরা-ছুরি,
বলব, "রে ভাই, বেজার কোরো নাকো,
গোল হতেছে, একটু থেমে থাকো,
কৃপাণ-খোলা শিশুর খেলা রাখো
খ্যাপার মতো কামান-ছোঁড়াছুঁড়ি।
একটুখানি সরে গিয়ে করো
সঙের মতো সঙিন ঝম-ঝমর।
আজকে শুধু এক বেলারই তরে
আমরা দোঁহে অমর দোঁহে অমর।'
বন্ধুজনে যদি পুণ্যফলে
করেন দয়া, আসেন দলে দলে,
গলায় বস্ত্র কব নয়নজলে,
"ভাগ্য নামে অতিবর্ষা-সম!
এক দিনেতে অধিক মেশামেশি
শ্রান্তি বড়োই আনে শেষাশেষি,
জান তো ভাই, দুটি প্রাণীর বেশি
এ কুলায়ে কুলায় নাকো মম।
ফাগুন-মাসে ঘরের টানাটানি--
অনেক চাঁপা, অনেকগুলি ভ্রমর ।
ক্ষুদ্র আমার এই অমরাবতী--
আমরা দুটি অমর, দুটি অমর।'

মাতাল - ওরে মাতাল, দুয়ার ভেঙে দিয়ে পথেই যদি করিস মাতামাতি,

মাতাল
- ক্ষণিকা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
ওরে মাতাল, দুয়ার ভেঙে দিয়ে
পথেই যদি করিস মাতামাতি,
থলিঝুলি উজাড় করে ফেলে
যা আছে তোর ফুরাস রাতারাতি,
অশ্লেষাতে যাত্রা করে শুরু
পাঁজিপুঁথি করিস পরিহাস,
অকারণে অকাজ লয়ে ঘাড়ে
অসময়ে অপথ দিয়ে যাস,
হালের দড়ি নিজের হাতে কেটে
পালের 'পরে লাগাস ঝোড়ো হাওয়া,
আমিও ভাই, তোদের ব্রত লব
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া।
পাড়ার যত জ্ঞানীগুণীর সাথে
নষ্ট হল দিনের পর দিন--
অনেক শিখে পক্ব হল মাথা
অনেক দেখে দৃষ্টি হল ক্ষীণ,
কত কালের কত মন্দ ভালো
বসে বসে কেবল জমা করি,
ফেলাছড়া-ভাঙাছেঁড়ার বোঝা
বুকের মাঝে উঠছে ভরি ভরি,
গুঁড়িয়ে সে-সব উড়িয়ে ফেলে দিক
দিক্-বিদিকে তোদের ঝোড়ো হাওয়া।
বুঝেছি ভাই, সুখের মধ্যে সুখ
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া।
হোক রে সিধা কুটিল দ্বিধা যত,
নেশায় মোরে করুক দিশাহারা,
দানোয় এসে হঠাৎ কেশে ধরে
এক দমকে করুক লক্ষ্মীছাড়া।
সংসারেতে সংসারী তো ঢের
কাজের হাটে অনেক আছে কেজো,
মেলাই আছে মস্ত বড়ো লোক--
সঙ্গে তাঁদের অনেক সেজো মেজো।
থাকুন তাঁরা ভবের কাজে লেগে,
লাগুক মোরে সৃষ্টিছাড়া হাওয়া--
বুঝেছি ভাই, কাজের মধ্যে কাজ
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া।
শপথ করে দিলাম ছেড়ে আজই
যা আছে মোর বুদ্ধি বিবেচনা,
বিদ্যা যত ফেলব ঝেড়ে ঝুড়ে
ছেড়ে ছুড়ে তত্ত্ব-আলোচনা।
স্মৃতির ঝারি উপুড় করে ফেলে
নয়নবারি শূন্য করি দিব,
উচ্ছ্বসিত মদের ফেনা দিয়ে
অট্টহাসি শোধন করি নিব।
ভদ্রলোকের তকমা-তাবিজ ছিঁড়ে
উড়িয়ে দেবে মদোন্মত্ত হাওয়া,
শপথ করে বিপথ-ব্রত নেব--
মাতাল হয়ে পাতাল-পানে ধাওয়া।

Sunday, April 10, 2016

যথাসময় - ভাগ্য যখন কৃপণ হয়ে আসে, বিশ্ব যবে নিঃস্ব তিলে তিলে,

যথাসময়
- ক্ষণিকা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
ভাগ্য যখন কৃপণ হয়ে আসে,
বিশ্ব যবে নিঃস্ব তিলে তিলে,
মিষ্ট মুখে ভুবন-ভরা হাসি
ওষ্ঠে শেষে ওজন-দরে মিলে,
বন্ধুজনে বন্ধ করে প্রাণ,
দীর্ঘদিন সঙ্গীহীন একা,
হঠাৎ পড়ে ঋণশোধেরই পালা,
ঋণীজনের না যায় পাওয়া দেখা,
তখন ঘরে বন্ধ হ রে কবি,
খিলের পরে খিল লাগাও খিল।
কথার সাথে গাঁথো কথার মালা,
মিলের সাথে মিল মিলাও মিল।
কপাল যদি আবার ফিরে যায়,
প্রভাত-কালে হঠাৎ জাগরণে,
শূন্য নদী আবার যদি ভরে
শরৎ-মেঘে ত্বরিত বরিষনে,
বন্ধু ফিরে বন্দী করে বুকে,
সন্ধি করে অন্ধ অরিদল,
অরুণ ঠোঁটে তরুণ ফোটে হাসি,
কাজল চোখে করুণ আঁখিজল,
তখন খাতা পোড়াও খ্যাপা কবি,
দিলের সাথে দিল লাগাও দিল।
বাহুর সাথে বাঁধো মৃণাল-বাহু,
চোখের সাথে চোখে মিলাও মিল।

Saturday, April 9, 2016

উদ্বোধন - শুধু অকারণ পুলকে ক্ষণিকের গান গা রে আজি প্রাণ

উদ্বোধন
- ক্ষণিকা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
শুধু অকারণ পুলকে
ক্ষণিকের গান গা রে আজি প্রাণ
ক্ষণিক দিনের আলোকে
যারা আসে যায়, হাসে আর চায়,
পশ্চাতে যারা ফিরে না তাকায়,
নেচে ছুটে ধায়, কথা না শুধায়,
ফুটে আর টুটে পলকে--
তাহাদেরি গান গা রে আজি প্রাণ
ক্ষণিক দিনের আলোকে।
প্রতি নিমেষের কাহিনী
আজি বসে বসে গাঁথিস নে আর,
বাঁধিস নে স্মৃতিবাহিনী।
যা আসে আসুক, যা হবার হোক,
যাহা চলে যায় মুছে যাক শোক,
গেয়ে ধেয়ে যাক দ্যুলোক ভূলোক
প্রতি পলকের রাগিণী।
নিমেষে নিমেষ হয়ে যাক শেষ
বহি নিমেষের কাহিনী।
ফুরায় যা দে রে ফুরাতে।
ছিন্ন মালার ভ্রষ্ট কুসুম
ফিরে যাস নেকো কুড়াতে।
বুঝি নাই যাহা চাই না বুঝিতে,
জুটিল না যাহা চাই না খুঁজিতে,
পুরিল না যাহা কে রবে যুঝিতে
তারি গহ্বর পুরাতে।
যখন যা পাস মিটায়ে নে আশ,
ফুরাইলে দিস ফুরাতে।
ওরে থাক্ থাক্ কাঁদনি!
দুই হাত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দে রে
নিজে হাতে বাঁধা বাঁধনি।
যে সহজ তোর রয়েছে সমুখে
আদরে তাহারে ডেকে নে রে বুকে,
আজিকার মতো যাক যাক চুকে
যত অসাধ্য-সাধনি।
ক্ষণিক সুখের উৎসব আজি,
ওরে থাক্ থাক্ কাঁদনি!
শুধু অকারণ পুলকে
নদীজলে-পড়া আলোর মতন
ছুটে যা ঝলকে ঝলকে।
ধরণীর 'পরে শিথিলবাঁধন
ঝলমল প্রাণ করিস যাপন,
ছুঁয়ে থেকে দুলে শিশির যেমন
শিরীষ ফুলের অলকে।
মর্মরতানে ভরে ওঠ্ গানে
শুধু অকারণ পুলকে।

Wednesday, April 6, 2016

তারা দিনের বেলা এসেছিল আমার ঘরে

গীতাঞ্জলী
-
তারা দিনের বেলা এসেছিল
আমার ঘরে,
বলেছিল, একটি পাশে
রইব প'ড়ে।
বলেছিল, দেবতা সেবায়
আমরা হব তোমার সহায়--
যা কিছু পাই প্রসাদ লব
পূজার পরে।
এমনি করে দরিদ্র ক্ষীণ
মলিন বেশে
সংকোচেতে একটি কোণে
রইল এসে।
রাতে দেখি প্রবল হয়ে
পশে আমার দেবালয়ে,
মলিন হাতে পূজার বলি
হরণ করে।
-
বোলপুর, ২৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭