Wednesday, June 29, 2016

স্বপ্ন আমার জোনাকি দীপ্ত প্রাণের মণিকা

স্বপ্ন আমার জোনাকি
দীপ্ত প্রাণের মণিকা,
স্তব্ধ আঁধার নিশীথে
উড়িছে আলোর কণিকা॥
-
My fancies are fireflies
speaks of living light--
twinkling in the dark.
-
২৬ কার্ত্তিক, ১৩৩৩ Nov.7.1926 বুডাপেস্ট্
Balatonfűred, Hungary

উৎসব - সংসারে প্রতিদিন আমরা যে সত্যকে

উৎসব
- ধর্ম (প্রবন্ধ)
-
সংসারে প্রতিদিন আমরা যে সত্যকে স্বার্থের
বিক্ষিপ্ততায় ভুলিয়া থাকি উৎসবের বিশেষ দিনে
সেই অখণ্ড সত্যকে স্বীকার করিবার দিন--এইজন্য
উৎসবের মধ্যে মিলন চাই। একলার উৎসব হইলে
চলে না। বস্তুত বিশ্বের সকল জিনিসকেই আমরা
যখন বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখি, তখনই এই সত্যকে
আমরা দেখিতে পাই না--তখনই প্রত্যেক খণ্ডপদার্থ
প্রত্যেক খণ্ডঘটনা আমাদের মনোযোগকে
স্বতন্ত্ররূপে আঘাত করিতে থাকে। ইহাতে পদে পদে
আমাদের চেষ্টা বাড়িয়া উঠে, কষ্ট বাড়িয়া যায়,
তাহাতে আমাদের আনন্দ থাকে না। এইজন্য আমাদের
প্রতিদিনের স্বার্থের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যের মধ্যে
পূর্ণতা নাই, পরিতৃপ্তি নাই, তাহার সম্পূর্ণ
তাৎপর্য পাই না, তাহার রাগিণী হারাইয়া
ফেলি-- তাহার চরমসত্য আমাদের অগোচরে থাকে।
কিন্তু যে মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা খণ্ডকে মিলিত
করিয়া দেখি, সেই ক্ষণেই সেই মিলনেই আমরা
সত্যকে উপলব্ধি করি এবং এই অনুভূতিতেই আমাদের
আনন্দ। তখনই আমরা দেখিতে পাই--

নিখিলে তব কী মহোৎসব। বন্দন করে বিশ্ব
শ্রীসম্পদভূমাস্পদ নির্ভয় শরণে।

সেইজন্যই বলিতেছিলাম, উৎসব একলার নহে।
মিলনের মধ্যেই সত্যের প্রকাশ-- সেই মিলনের
মধ্যেই সত্যকে অনুভব করা উৎসবের সম্পূর্ণতা।
একলার মধ্যে যাহা ধ্যানযোগে বুঝিবার চেষ্টা
করি, নিখিলের মধ্যে তাহাই প্রত্যক্ষ করিলে
তবেই আমাদের উপলব্ধি সম্পূর্ণ হয়।
মিলনের মধ্যে যে সত্য, তাহা কেবল বিজ্ঞান নহে
তাহা আনন্দ, তাহা রসস্বরূপ, তাহা প্রেম। তাহা
আংশিক নহে, তাহা সমগ্র; কারণ, তাহা কেবল
বুদ্ধিকে নহে, তাহা হৃদয়কেও পূর্ণ করে। যিনি
নানাস্থান হইতে আমাদের সকলকে একের দিকে
আকর্ষণ করিতেছেন, যাঁহার সম্মুখে, যাঁহার দক্ষিণ
করতলচ্ছায়ায় আমরা সকলে মুখোমুখি করিয়া বসিয়া
আছি, তিনি নীরস সত্য নহেন, তিনি প্রেম। এই
প্রেমই উৎসবের দেবতা--মিলনই তাঁহার সজীব
সচেতন মন্দির।

মিলনের যে শক্তি, প্রেমের যে প্রবল সত্যতা,
তাহার পরিচয় আমরা পৃথিবীতে পদে পদে
পাইয়াছি। পৃথিবীতে ভয়কে যদি কেহ সম্পূর্ণ
অতিক্রম করিতে পারে, বিপদকে তুচ্ছ করিতে পারে,
ক্ষতিকে অগ্রাহ্য করিতে পারে, মৃত্যুকে উপেক্ষা
করিতে পারে, তবে তাহা প্রেম। স্বার্থপরতাকে
আমরা জগতের একটা সুকঠিন সত্য বলিয়া
জানিয়াছি, সেই স্বার্থপরতার সুদৃঢ় জালকে
অনায়াসে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করিয়া দেয় প্রেম। যে
হতভাগ্য দেশবাসীরা পরস্পরের সুখে দুঃখে সম্পদে
বিপদে এক হইয়া মিলিতে পারে না, তাহারা
জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ সত্য হইতে ভ্রষ্ট হইয়াছে
বলিয়া শ্রী হইতে ভ্রষ্ট হয়--তাহারা ত্যাগ
করিতে পারে না, সুতরাং লাভ করিতে জানে না--
তাহারা প্রাণ দিতে পারে না, সুতরাং তাহাদের
জীবনধারণ করা বিড়ম্বনা। তাহারা পৃথিবীতে
নিয়তই ভয়ে ভীত হইয়া, অপমানে লাঞ্ছিত হইয়া
দীনপ্রাণে নতশিরে ভ্রমণ করে। ইহার কারণ কী?
ইহার কারণ এই যে, তাহারা সত্যকে পাইতেছে না,
প্রেমকে পাইতেছে না, এইজন্যই কোনোমতেই বল
পাইতেছে না। আমরা সত্যকে যে-পরিমাণে উপলব্ধি
করি, তাহার জন্য সেই পরিমাণে মূল্য দিতে
পারি--আমরা ভাইকে যতখানি সত্য বলিয়া জানি,
ভাইয়ের জন্য ততখানি ত্যাগ করিতে পারি।
আমাদিগকে যে জলস্থল বেষ্টিত করিয়া আছে, আমরা
যে-সকল লোকের মাঝখানে জন্মগ্রহণ করিয়াছি,
যথেষ্ট পরিমাণে যদি তাহাদের সত্যতা অনুভব
করিতে না পারি, তবে তাহাদের জন্য আত্মোৎসর্গ
করিতে পারিব না।

তাই বলিতেছি, সত্য প্রেমরূপে আমাদের অন্তঃকরণে
আবির্ভূত হইলেই সত্যের সম্পূর্ণ বিকাশ হয়। তখন
বুদ্ধির দ্বিধা হইতে, মৃত্যুপীড়া হইতে, স্বার্থের
বন্ধন ও ক্ষতির আশঙ্কা হইতে আমরা মুক্তিলাভ
করি। তখন এই অস্থির সংসারের মাঝখানে আমাদের
চিত্ত এমন একটি চরম স্থিতির আদর্শ খুঁজিয়া পায়,
যাহার উপর সে আপনার সর্বস্ব সমর্পণ করিতে
প্রস্তুত হয়।

প্রাত্যহিক উদ্ভ্রান্তির মধ্যে মাঝে মাঝে এই
স্থিতির সুখ, এই প্রেমের স্বাদ পাইবার জন্যই
মানুষ উৎসবক্ষেত্রে সকল মানুষকে একত্রে আহ্বান
করে। সেদিন তাহার ব্যবহার প্রাত্যহিক
ব্যবহারের বিপরীত হইয়া উঠে। সেদিন একলার গৃহ
সকলের গৃহ হয়, একলার ধন সকলের জন্য ব্যয়িত হয়।
সেদিন ধনী দরিদ্রকে সম্মানদান করে, সেদিন
পণ্ডিত মূর্খকে আসনদান করে। কারণ আত্মপর
ধনিদরিদ্র পণ্ডিতমূর্খ এই জগতে একই প্রেমের
দ্বারা বিধৃত হইয়া আছে, ইহাই পরম সত্য--এই
সত্যেরই প্রকৃত উপলব্ধি পরমানন্দ। উৎসবদিনের
অবারিত মিলন এই উপলব্ধিরই অবসর। যে ব্যক্তি
এই উপলব্ধি হইতে একেবারেই বঞ্চিত হইল, সে
ব্যক্তি উন্মুক্ত উৎসবসম্পদের মাঝখানে আসিয়াও
দীনভাবে রিক্তহস্তে ফিরিয়া চলিয়া গেল।
সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম--ব্রহ্ম সত্যস্বরূপ,
জ্ঞানস্বরূপ, অনন্তস্বরূপ। কিন্তু এই জ্ঞানময়
অনন্তসত্য কিরূপে প্রকাশ পাইতেছেন?
"আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি"--তিনি আনন্দরূপে
অমৃতরূপে প্রকাশ পাইতেছেন; যাহা-কিছু প্রকাশ
পাইতেছে তাহা তাঁহার আনন্দরূপ, তাঁহার অমৃতরূপ
অর্থাৎ তাঁহার প্রেম। বিশ্বজগৎ তাঁহার অমৃতময়
আনন্দ, তাঁহার প্রেম।

সত্যের পরিপূর্ণতাই প্রকাশ, সত্যের পরিপূর্ণতাই
প্রেম, আনন্দ। আমরা তো লৌকিক ব্যাপারেই
দেখিয়াছি অপূর্ণ সত্য অপরিস্ফুট। এবং ইহাও
দেখিয়াছি যে, যে-সত্য আমরা যত সম্পূর্ণরূপে
উপলব্ধি করিব, তাহাতেই আমাদের তত আনন্দ, তত
প্রেম। উদাসীনের নিকট একটা তৃণে কোনো আনন্দ
নাই, তৃণ তাহার নিকট তুচ্ছ, তৃণের প্রকাশ তাহার
নিকট অত্যন্ত ক্ষীণ। কিন্তু উদ্ভিদ্বেত্তার নিকট
তৃণের মধ্যে যথেষ্ট আনন্দ আছে, কারণ তৃণের
প্রকাশ তাহার নিকট অত্যন্ত ব্যাপক,
উদ্ভিদ্পর্যায়ের মধ্যে তৃণের সত্য যে ক্ষুদ্র নহে,
তাহা সে জানে। যে ব্যক্তি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিধারা
তৃণকে দেখিতে জানে তৃণের মধ্যে তাহার আনন্দ
আরও পরিপূর্ণ--তাহার নিকট নিখিলের প্রকাশ এই
তৃণের প্রকাশের মধ্যে প্রতিবিম্বিত। তৃণের সত্য
তাহার নিকট ক্ষুদ্র সত্য অস্ফুট সত্য নয় বলিয়াই
সে তাহার আনন্দ তাহার প্রেম উদ্বোধিত করে। যে
মানুষের প্রকাশ আমার নিকট ক্ষুদ্র, আমার নিকট
অস্ফুট, তাহাতে আমার প্রেম অসম্পূর্ণ। যে মানুষকে
আমি এতখানি সত্য বলিয়া জানি যে, তাহার জন্য
প্রাণ দিতে পারি, তাহাতে আমার আনন্দ, আমার
প্রেম। অন্যের স্বার্থ অপেক্ষা নিজের স্বার্থ
আমার কাছে এত অধিক সত্য যে, অন্যের
স্বার্থসাধনে আমার প্রেম নাই--কিন্তু বুদ্ধদেবের
নিকট জীবমাত্রেরই প্রকাশ এত সুপরিস্ফুট যে
তাহাদের মঙ্গলচিন্তায় তিনি রাজ্যত্যাগ
করিয়াছিলেন।

তাই বলিতেছি, আনন্দ হইতেই সত্যের প্রকাশ এবং
সত্যের প্রকাশ হইতেই আনন্দ। আনন্দাদ্ধ্যেব
খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে--এই যে যাহা-কিছু
হইয়াছে, ইহা সমস্তই আনন্দ হইতেই জাত। অতএব
যতক্ষণ পর্যন্ত এই জগৎ আমাদের নিকট সেই
আনন্দরূপে, প্রেমরূপে ব্যক্ত না হয়, ততক্ষণ তাহা
পূর্ণসত্যরূপেই ব্যক্ত হইল না। জগতে আমাদের
আনন্দ, জগতে আমাদের প্রেমই সত্যের প্রকাশরূপের
উপলব্ধি। জগৎ আছে--এটুকু সত্য কিছুই নহে, কিন্তু
জগৎ আনন্দ--এই সত্যই পূর্ণ।

আনন্দ কেমন করিয়া আপনাকে প্রকাশ করে?
প্রাচুর্যে, ঐশ্বর্যে, সৌন্দর্যে। জগৎ-প্রকাশে
কোথাও দারিদ্র্য নাই, কৃপণতা নাই, যেটুকুমাত্র
প্রয়োজন তাহারই মধ্যে সমস্ত অবসান নাই। এই যে
লক্ষ লক্ষ নক্ষত্র হইতে আলোকের ঝরনা আকাশময়
ঝরিয়া পড়িতেছে, যেখানে আসিয়া ঠেকিতেছে
সেখানে বর্ণে-তাপে-প্রাণে উচ্ছ্বসিত হইয়া
উঠিতেছে, ইহা আনন্দের প্রাচুর্য। প্রয়োজন যতটুকু,
ইহা তাহার চেয়ে অনেক বেশি--ইহা অজস্র।
বসন্তকালে লতাগুল্মের গ্রন্থিতে গ্রন্থিকে কুঁড়ি
ধরিয়া ফুল ফুটিয়া পাতা গজাইয়া একেবারে যে
মাতামাতি আরম্ভ হয়, আম্রশাখায় মুকুল ভরিয়া
উঠিয়া তাহার তলদেশে অনর্থক রাশিরাশি ঝরিয়া
পড়ে, ইহা আনন্দের প্রাচুর্য। সূর্যোদয়ে সূর্যাস্তে
মেঘের মুখে যে কত পরিবর্তমান বিচিত্র রঙের
পাগলামি প্রকাশ হইতে থাকে, ইহার কোনো
প্রয়োজন দেখি না--ইহা আনন্দের প্রাচুর্য।
প্রভাতে পাখিদের শত শত কণ্ঠ হইতে উদ্গিরিত
সুরের উচ্ছ্বাসে অরুণগগনে যেন চারিদিক হইতে
গানের হোরিখেলা চলিতে থাকে, ইহাও প্রয়োজনের
অতিরিক্ত, ইহা আনন্দেরই প্রাচুর্য। আনন্দ উদার,
আনন্দ অকৃপণ,--সৌন্দর্যে-সম্পদে আনন্দ আপনাকে
নিঃশেষে বিলাইতে গিয়া আপনার আর অন্ত পায়
না।

উৎসবের দিনে আমরা যে সত্যের নামে বহুতর লোকে
সম্মিলিত হই, তাহা আনন্দ, তাহা প্রেম। উৎসবে
পরস্পরকে পরস্পরের কোনো প্রয়োজন নাই--সকল
প্রয়োজনের অধিক যাহা, উৎসব তাহাই লইয়া।
এইজন্য উৎসবের একটা প্রধান লক্ষণ প্রাচুর্য।
এইজন্য উৎসবদিনে আমরা প্রতিদিনের কার্পণ্য
পরিহার করি প্রতিদিন যেরূপ প্রয়োজন হিসাব
করিয়া চলি, আজ তাহা অকাতরে জলাঞ্জলি দিতে
হয়। দৈন্যের দিন অনেক আছে, আজ ঐশ্বর্যের দিন।

আজ সৌন্দর্যের দিন। সৌন্দর্যও প্রয়োজনের বাড়া।
ইহা আবশ্যকের নহে, ইহা আনন্দের বিকাশ--ইহা
প্রেমের ভাষা। ফুল যদি সুন্দর না হইত, তবু সে
আমার জ্ঞানগম্য হইত, ইন্দ্রিয়গম্য হইত--কিন্তু ফুল
যে আমাকে সৌন্দর্য দেয়, সেটা অতিরিক্ত দান। এই
বাহুল্যদানই আমার নিকট হইতে বাহুল্য প্রতিদান
গ্রহণ করে--সেই যে বাহুল্য প্রতিদান, তাহাই
প্রেম। এই বাহুল্য প্রতিদানটুকু লইয়া ফুলেরই বা
কী, আর কাহারই বা কী। কিন্তু একদিকে এই বাহুল্য
সৌন্দর্য, আর একদিকে এই বাহুল্য প্রেম, ইহা
লইয়াই জগতের নিত্যোৎসব--ইহাই আনন্দসমুদ্রের
তরঙ্গলীলা।

তাই উৎসবের দিন সৌন্দর্যের দিন। এই দিনকে
আমরা ফুলপাতার দ্বারা সাজাই, দীপমালার দ্বারা
উজ্জ্বল করি, সংগীতের দ্বারা মধুর করিয়া তুলি।

এইরূপে মিলনের দ্বারা, প্রাচুর্যের দ্বারা,
সৌন্দর্যের দ্বারা আমরা উৎসবের দিনকে বৎসরের
সাধারণ দিনগুলির মুকুটমণিস্বরূপ করিয়া তুলি।
যিনি আনন্দের প্রাচুর্যে, ঐশ্বর্যে, সৌন্দর্যে
বিশ্বজগতের মধ্যে অমৃতরূপে প্রকাশমান--
আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি--উৎসবের দিনে তাঁহারই
উপলব্ধিদ্বারা পূর্ণ হইয়া আমাদের মনুষ্যত্ব আপন
ক্ষণিক অবস্থাগত সমস্ত দৈন্য দূর করিবে এবং
অন্তরাত্মার চিরন্তন ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্য প্রেমের
আনন্দে অনুভব ও বিকাশ করিতে থাকিবে। এই দিনে
সে অনুভব করিবে, সে ক্ষুদ্র নহে, সে বিচ্ছিন্ন
নহে, বিশ্বই তাহার নিকেতন, সত্যই তাহার আশ্রয়,
প্রেম তাহার চরমগতি, সকলেই তাহার আপন--ক্ষমা
তাহার পক্ষে স্বাভাবিক, ত্যাগ তাহার পক্ষে
সহজ, মৃত্যু তাহার পক্ষে নাই।

কিন্তু বলা বাহুল্য, উৎসবের এই আয়োজন তেমন
দুঃসাধ্য নহে, ইহার উপলব্ধি যেমন দুরূহ। উৎসব
অপরূপসুন্দর শতদলপদ্মের ন্যায় যখন বিকশিত হইয়া
উঠে তখন আমাদের মধ্যে কতজন আছেন যাঁহারা
মধুকরের মতো ইহার সুগন্ধ মধুকোষের মধ্যে নিমগ্ন
হইয়া ইহার সুধারস উপভোগ করিতে পারেন?
এদিনেও সম্মিলনকে আমরা কেবল জনতা করিয়া
ফেলি, আয়োজনকে কেবল আড়ম্বর করিয়া তুলি।
এদিনেও তুচ্ছ কৌতূহলে আমাদের চিত্ত কেবল
বাহিরেই বিক্ষিপ্ত হইয়া বেড়ায়। যে আনন্দ
অন্তরীক্ষে অন্তহীন জ্যোতিষ্কলোকের শিখায়
শিখায় নিরন্তর আন্দোলিত, আমাদের গৃহপ্রাঙ্গণে
দীপমালা জ্বালাইয়া আমরা কি সেই আনন্দের
তরঙ্গে আমাদের আনন্দকে সচেতনভাবে মিলিত
করিয়াছি? আমাদের এই সংগীতধ্বনি কি আমাদিগকে
জগতের সেই গভীরতম অন্তঃপুরে প্রবাহিত করিয়া
লইয়া যাইতেছে--যেখানে বিশ্বভুবনের সমস্ত সুর
তাহার আপাতপ্রতীয়মান সমস্ত বিরোধ-বিশৃঙ্খলতা
মিলাইয়া দিয়া প্রতি মুহূর্তেই পরিপূর্ণ
রাগিণীরূপে উন্মেষিত হইয়া উঠিতেছে?

হায়, প্রত্যেক দিনে যে দরিদ্র, একদিনে সে
ঐশ্বর্যলাভ করিবে কী করিয়া? প্রত্যেক দিনে
যাহার জীবন শোভা হইতে নির্বাসিত, হঠাৎ
একদিনেই সে সুন্দরের সহিত একাসনে বসিবে কেমন
করিয়া? দিনে দিনে যে ব্যক্তি সত্যে-প্রেমে
প্রস্তুত হইয়াছে, এই উৎসবের দিনে তাহারই
উৎসব। হে বিশ্বযজ্ঞপ্রাঙ্গণের উৎসব-দেবতা, আমি
কে? আজি উৎসবদিনে এই আসন গ্রহণ করিবার
অধিকার আমার কী আছে? জীবনের নৌকাকে আমি যে
প্রতিদিন দাঁড় টানিয়া বাহিয়া চলিয়াছি, সে কি
তোমার মহোৎসবের সোনাবাঁধানো ঘাটে আসিয়া
আজও পৌঁছিয়াছে? তাহার বাধা কি একটি? তাহার
লক্ষ্য কি ঠিক থাকে? প্রতিকূল তরঙ্গের আঘাত সে
কি সামলাইতে পারিল? দিনের পর দিন কোথায় সে
ঘুরিয়া বেড়াইতেছে? আজ কোথা হইতে সহসা তোমার
উৎসবে সকলকে আহ্বানের ভার লইয়া, হে
অন্তর্যামিন্, আমার অন্তরাত্মা তোমার সমক্ষে
লজ্জিত হইতেছে। তাহাকে ক্ষমা করিয়া তুমিই
তাহাকে আহ্বান করো। একদিন নহে, প্রত্যহ
তাহাকে আহ্বান করো। ফিরাও, ফিরাও, তাহাকে
আত্মাভিমান হইতে ফিরাও। দুর্বল প্রবৃত্তির
নিদারুণ অপমান হইতে তাহাকে রক্ষা করো। বুদ্ধির
জটিলতার মধ্যে আর তাহাকে নিষ্ফল হইতে দিয়ো
না। তাহাকে প্রতিদিন তোমার বিশ্বলোকে, তোমার
আনন্দলোকে, তোমার সৌন্দর্যলোকে আকর্ষণ করিয়া
তাহার চিরজীবনের সমস্ত দৈন্য চূর্ণ করিয়া
ফেলো। যে মহাপুরুষগণ তোমার নিত্যোৎসবের
নিমন্ত্রণে আহূত, যাঁহারা প্রতিদিনই
নিখিললোকের সহিত তোমার আনন্দভোজে আসনগ্রহণ
করিয়া থাকেন, তাহাকে বিনম্রনতশিরে তাঁহাদের
পদধূলি মাথায় তুলিয়া লইতে দাও। তাহার মিথ্যা
গর্ব, তাহার ব্যর্থ চেষ্টা, তাহার বিক্ষিপ্ত
প্রবৃত্তি আজই তুমি অপসারিত করিয়া দাও--কাল
হইতেই সে যেন নত হইয়া তোমার আসনের
সর্বনিম্নস্থানে ধূলিতলে বসিবার অধিকারী হইতে
পারে। তোমার উৎসব-সভার মহাসংগীত সেখানে
কান পাতিয়া শুনা যাইবে, তোমার আনন্দ-উৎসের
রসস্রোত সেখানকার ধূলিকেও অভিষিক্ত করিবে।
কিন্তু যেখানে অহংকার, যেখানে তর্ক, যেখানে
বিরোধ, যেখানে খ্যাতিপ্রতিপত্তির জন্য
প্রতিযোগিতা, যেখানে মঙ্গলকর্মও লোকে
লুব্ধভাবে গর্বিতভাবে করে, যেখানে পুণ্যকর্ম
অভ্যস্ত আচারমাত্রে পর্যবসিত--সেখানে সমস্ত
আচ্ছন্ন, সমস্ত রুদ্ধ, সেখানে ক্ষুদ্র বৃহৎরূপে
প্রতিভাত হয়, বৃহৎ ক্ষুদ্র হইয়া পড়ে, সেখানে
তোমার বিশ্বযজ্ঞোৎসবের আহ্বান উপহসিত হইয়া
ফিরিয়া আসে। সেখানে তোমার সূর্য আলোক দেয়
কিন্তু তোমার স্বহস্তলিখিত আলোক-লিপি লইয়া
প্রবেশ করিতে পারে না, সেখানে তোমার উদার
বায়ু নিঃশ্বাস জোগায় মাত্র, অন্তঃকরণের মধ্যে
বিশ্বপ্রাণকে সমীরিত করিতে পারে না। সেই
উদ্ধত কারাগারের পাষাণপ্রাসাদ হইতে তাহাকে
উদ্ধার করো--তোমার উৎসব-প্রাঙ্গণের ধুলায়
তাহাকে লুটাইতে দাও। জগতে কেহই তাহাকে না
চিনুক, কেহই না মানুক, সে যেন এক প্রান্তে
থাকিয়া তোমাকে চিনে তোমাকে মানিয়া চলে। এই
সৌভাগ্য কবে তাহার ঘটিবে তাহা জানি না, কবে
তুমি তাহাকে তোমার উৎসবের অধিকারী করিবে
তাহা তুমিই জান--আপাতত তাহার এই নিবেদন যে,
এই প্রার্থনাটিও যেন তাহার অন্তরে যেন যথার্থ
সত্য হইয়া উঠে--সত্যকে সে যেন সত্যই চায়,
অমৃতকে সে যেন মৌখিক যাচ্ঞাবাক্যের দ্বারা
অপমান না করে।
-
১৩১২

Thursday, June 16, 2016

আজি বর্ষারাতের শেষে সজল মেঘের কোমল কালোয় অরুণ আলো মেশে ॥

আজি বর্ষারাতের শেষে
সজল মেঘের কোমল কালোয় অরুণ আলো মেশে॥
বেণুবনের মাথায় মাথায় রঙ লেগেছে পাতায় পাতায়,
রঙের ধারায় হৃদয় হারায়, কোথা যে যায় ভেসে॥
এই ঘাসের ঝিলিমিলি,
তার সাথে মোর প্রাণের কাঁপন এক তালে যায় মিলি।
মাটির প্রেমে আলোর রাগে রক্তে আমার পুলক লাগে--
বনের সাথে মন যে মাতে, ওঠে আকুল হেসে॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৬ জুন, ১৯২২
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

পুব সাগরের পার হতে কোন্ এল পরবাসী

পুব-সাগরের পার হতে কোন্ এল পরবাসী--
শূন্যে বাজায় ঘন ঘন হাওয়ায় হাওয়ায় সন সন
সাপ খেলাবার বাঁশি॥
সহসা তাই কোথা হতে   কুলু কুলু কলস্রোতে
দিকে দিকে জলের ধারা ছুটেছে উল্লাসী॥
আজ দিগন্তে ঘন ঘন গভীর গুরু গুরু ডমরুর হয়েছে ওই
শুরু।
তাই শুনে আজ গগনতলে   পলে পলে দলে দলে
অগ্নিবরন নাগ নাগিনী ছুটেছে উদাসী॥
-
রাগ: মিশ্র মল্লার
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): শ্রাবণ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1922
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

এই সকাল বেলার বাদল আঁধারে আজি বনের বীণায় কী সুর বাঁধা রে ॥

এই সকাল বেলার বাদল-আঁধারে
আজি বনের বীণায় কী সুর বাঁধা রে॥
ঝরো ঝরো বৃষ্টিকলরোলে   তালের পাতা মুখর ক'রে
তোলে রে,
উতল হাওয়া বেণুশাখায় লাগায় ধাঁদা রে॥
ছায়ার তলে তলে জলের ধারা ওই
হেরো দলে দলে নাচে তাথৈ থৈ-- তাথৈ
থৈ।
মন যে আমার পথ-হারানো সুরে সকল আকাশ বেড়ায়
ঘুরে ঘুরে রে,
শোনে যেন কোন্ ব্যাকুলের করুণ কাঁদা রে॥
-
রাগ: কাফি
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২০ জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩ জুন, ১৯২২
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজ আকাশের মনের কথা ঝরো ঝরো বাজে

আজ আকাশের মনের কথা ঝরো ঝরো বাজে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে॥
দিঘির কালো জলের 'পরে মেঘের ছায়া ঘনিয়ে
ধরে,
বাতাস বহে যুগান্তরের প্রাচীন বেদনা যে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে॥
আঁধার বাতায়নে
একলা আমার কানাকানি ওই আকাশের সনে।
ম্লানস্মৃতির বাণী যত  পল্লবমর্মরের মতো
সজল সুরে ওঠে জেগে ঝিল্লিমুখর সাঁঝে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে॥
-
রাগ: পিলু
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): শ্রাবণ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1922
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজ নবীন মেঘের সুর লেগেছে আমার মনে ।

আজ   নবীন মেঘের সুর লেগেছে আমার মনে।
আমার ভাবনা যত উতল হল অকারণে॥
কেমন ক'রে যায় যে ডেকে, বাহির করে ঘরের
থেকে,
ছায়াতে চোখ ফেলে ছেয়ে ক্ষণে ক্ষণে॥
বাঁধনহারা জলধারার কলরোলে
আমারে কোন্ পথের বাণী যায় যে ব'লে।
সে পথ গেছে নিরুদ্দেশে মানসলোকে গানের
শেষে
চিরদিনের বিরহিণীর কুঞ্জবনে॥
-
রাগ: মিশ্র মল্লার
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২ আষাঢ়, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৬ জুন, ১৯২২
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

কখন বাদল ছোঁওয়া লেগে মাঠে মাঠে ঢাকে মাটি সবুজ মেঘে মেঘে ॥

কখন বাদল-ছোঁওয়া লেগে
মাঠে মাঠে ঢাকে মাটি সবুজ মেঘে মেঘে॥
ওই ঘাসের ঘনঘোরে
ধরণীতল হল শীতল চিকন আভায় ভ'রে--
ওরা হঠাৎ-গাওয়া গানের মতো এল প্রাণের
বেগে॥
ওরা যে এই প্রাণের রণে মরুজয়ের সেনা,
ওদের সাথে আমার প্রাণের প্রথম যুগের চেনা--
তাই এমন গভীর স্বরে
আমার আঁখি নিল ডাকি ওদের খেলাঘরে--
ওদের দোল দেখে আজ প্রাণে আমার দোলা ওঠে
জেগে॥
-
রাগ: দেশ-কেদারা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১১ জুন, ১৯২২
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

ওই যে ঝড়ের মেঘের কোলে বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে আঁচলখানি দোলে ॥

ওই-যে ঝড়ের মেঘের কোলে
বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে আঁচলখানি দোলে॥
ওরই গানের তালে তালে আমে জামে শিরীষ শালে
নাচন লাগে পাতায় পাতায় আকুল কল্লোলে॥
আমার  দুই আঁখি ওই সুরে
যায় হারিয়ে সজল ধারায় ওই ছায়াময় দূরে।
ভিজে হাওয়ায় থেকে থেকে কোন্ সাথি মোর যায় যে ডেকে,
একলা দিনের বুকের ভিতর ব্যথার তুফান তোলে॥
-
রাগ: দেশ-বাউল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): শ্রাবণ, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1922
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

উতল ধারা বাদল ঝরে সকল বেলা একা ঘরে ॥

উতল-ধারা বাদল ঝরে।   সকল বেলা একা ঘরে॥
সজল হাওয়া বহে বেগে, পাগল নদী ওঠে জেগে,
আকাশ ঘেরে কাজল মেঘে, তমালবনে আঁধার করে॥
ওগো বঁধু দিনের শেষে এলে তুমি কেমন বেশে--
আঁচল দিয়ে শুকাব জল, মুছাব পা আকুল কেশে।
নিবিড় হবে তিমির-রাতি, জ্বেলে দেব প্রেমের বাতি,
পরানখানি দেব পাতি-- চরণ রেখো তাহার 'পরে॥
ভুলে গিয়ে জীবন মরণ লব তোমায় ক'রে বরণ--
করিব জয় শরম-ত্রাসে, দাঁড়াব আজ তোমার পাশে--
বাঁধন বাধা যাবে জ্ব'লে সুখ দুঃখ দেব দ'লে,
ঝড়ের রাতে তোমার সাথে বাহির হব অভয়ভরে॥
উতল-ধারা বাদল ঝরে,   দুয়ার খুলে এলে ঘরে।
চোখে আমার ঝলক লাগে, সকল মনে পুলক জাগে,
চাহিতে চাই মুখের বাগে-- নয়ন মেলে কাঁপি ডরে॥
-
রাগ: দেশ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1318
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1911
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়,
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

মেঘের কোলে কোলে যায় রে চলে বকের পাঁতি ।

মেঘের কোলে কোলে যায় রে চলে বকের পাঁতি।
ওরা   ঘর-ছাড়া মোর মনের কথা যায় বুঝি ওই গাঁথি গাঁথি॥
সুদূরের বীণার স্বরে কে ওদের হৃদয় হরে
দুরাশার দুঃসাহসে উদাস করে--
সে কোন্ উধাও হাওয়ার পাগলামিতে পাখা ওদের ওঠে মাতি॥
ওদের ঘুম ছুটেছে, ভয় টুটেছে একেবারে,
অলক্ষ্যেতে লক্ষ ওদের-- পিছন-পানে তাকায় না রে।
যে বাসা ছিল জানা    সে ওদের দিল হানা,
না-জানার পথে ওদের নাই রে মানা--
ওরা   দিনের শেষে দেখেছে কোন্ মনোহরণ আঁধার রাতি॥
-
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৭ ভাদ্র, ১৩২৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২ সেপ্টেম্বর, ১৯২১
রচনাস্থান: কলকাতা
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে

এই শ্রাবণের বুকের ভিতর আগুন আছে।
সেই আগুনের কালোরূপ যে আমার চোখের 'পরে নাচে॥
ও তার শিখার জটা ছড়িয়ে পড়ে দিক হতে ওই দিগন্তরে,
তার কালো আভার কাঁপন দেখো তালবনের ওই গাছে গাছে॥
বাদল-হাওয়া পাগল হল সেই আগুনের হুহুঙ্কারে।
দুন্দুভি তার বাজিয়ে বেড়ায় মাঠ হতে কোন্ মাঠের পারে।
ওরে, সেই আগুনের পুলক ফুটে কদম্ববন রঙিয়ে উঠে,
সেই আগুনের বেগ লাগে আজ আমার গানের পাখার পাছে॥
-
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ১৫ ভাদ্র, ১৩২৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৩১ অগাস্ট, ১৯২১
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর