Wednesday, March 29, 2017

আনিলাম অপরিচিতের নাম ধরনীতে - শেষের কবিতা

শেষের কবিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
-
আনিলাম
অপরিচিতের নাম
ধরনীতে,
পরিচিত জনতার সরনীতে।
আমি আগনত্তক,
আমি জনগণেশের প্রচন্ড কৌতুক।
খোলো দ্বার,
বার্তা আনিয়াছি বিধাতার।
মহাকালেম্বর
পাঠায়েছে দুর্লক্ষ্য অক্ষর,
বল্ দুৎসাহসী কে কে
মৃত্যু পণ রেখে
দিবি তার দুরূহ উত্তর।
শুনিবে না।
মুঢ়তার সেনা
করে পথরোধ।
ব্যর্ত ক্রোধ
হুংকারিয়া পড়ে বুকে-
তরঙ্গের নিষ্ফলতা
নিত্য যথা
মরে মাথা ঠুকে
শৈলতট-পরে
আত্মঘাতী দম্ভভরে।
পুষ্পমাল্য নাহি মোর, রিক্ত বক্ষতল,
নাহি বর্ম অঙ্গদ কুন্ডল।
শূন্য এ ললাটপটে লিখা
গুঢ় জয়টিকা।
ছিন্নকস’া দরিদ্রের বেশ। ???
করিব নিঃশেষ
তোমার ভান্ডার।
খোলা খোলা দ্বার।
অকস্মাৎ
বাড়ায়েছি হাত,
যা দিবার দাও অচিরাৎ!
বক্ষ তব কেঁপে ওঠে, কম্পিত অর্গল,
পৃথ্বী টলমল।
ভয়ে আর্ত উঠিছে চীৎকারি
দিগন- বিদারি-
‘ফিরে যা এখনি,
রে দুর্দান- দুরন- ভিখারি,
তোর কন্ঠধ্বনি
ঘুরি ঘুরি
নিশীথনিদ্রার বক্ষে হানে তীব্র ছুরি।’
অস্ত্র আনো।
ঝঞ্চ্র নিয়া আমার পঞ্জরে হানো।
মৃত্যুরে মারুক মৃত্যু, অক্ষয় এ প্রাণ
করি যাব দান।
শৃঙ্খল জড়াও তবে,
বাঁধো মোরে, খন্ড খন্ড হবে
মুহূর্তে চকিতে-
মুক্তি তব আমারি মুক্তিতে।
শাস্ত্র আনো।
হানো মোরে, হানো।
পন্ডিতে পন্ডিতে
ঊর্ধ্ব স্বরে চাহিবে খন্ডিতে
দিব্য বানী।
জানি জানি,
তর্কবাণ
হয়ে যাবে খান-খান।
মুক্ত হবে জীর্ণ বাক্যে আচ্ছন্ন দু চোখ,
হেরিবে আলোক।
অগ্নি জ্বালো।
আজিকার যাহা ভালো
কল্য যদি হয় তাহা কালো,
যদি তাহা ভস্ম হয়
বিশ্বময়,
ভস্ম হোক।
দুর করো শোক।
মোর অগ্নিপরীক্ষায়
ধন্য হোক বিশ্বলোক অপূর্ব দীক্ষায়।
আমার দুর্বোধ বানী
বিরুদ্ধ বুদ্ধির পরে মুষ্টি হানি
করিবে তাহারে উচ্চকিত,
আতঙ্কিত।
উন্মাদ আমার ছন্দ
দিবে ধন্দ
শানি-লুব্ধ মুমুক্ষুরে,
ভিক্ষাজীর্ণ বুভুক্ষুরে।
শিরে হস- হেনে
একে একে নিবে মেনে
ক্রোধে ক্ষোভ ভয়ে
লোকালয়ে
অপরিচিতের জয়,
অপরিচিতের পরিচয়-
যে অপরিচিত
বৈশাখের রুদ্র ঝড়ে বসুন্ধরা করে
আন্দোলিত,
হানি বজ্রমুঠি
মেঘের কার্পন্য টুটি
সংগোপন বর্ষনসঞ্চয়
ছিন্ন করে, মুক্ত করে সর্বজগন্ময়।।