Saturday, August 26, 2017

এতদিন তুমি সখা, চাহ নি কিছু

এতদিন তুমি সখা, চাহ নি কিছু;
নীরবে ছিলে করি নয়ন নিচু।
রাজ-অঙ্গুরী মম করিলাম দান,
তোমারে দিলাম মোর শেষ সম্মান।
তব বীর-হাতে এই ভূষণের সাথে
আমার প্রণাম যাক তব পিছু পিছু।
-
- শ্যামা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ

আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ,
আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা--
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে
এনেছি ডালা ॥
এসো গো শারদলক্ষ্ণী,
তোমার শুভ্র মেঘের রথে,
এসো নির্মল নীলপথে,
এসো ধৌত শ্যামল আলো-ঝলমল-বনগিরিপর্বতে--
এসো মুকুটে পরিয়া শ্বেতশতদল
শীতল-শিশির-ঢালা ॥
ঝরা মালতীর ফুলে
আসন বিছানো নিভৃত কুঞ্জে ভরা
গঙ্গার কূলে
ফিরিছে মরাল ডানা পাতিবারে
তোমার চরণমূলে।
গুঞ্জরতান তুলিয়ো তোমার সোনার
বীণার তারে মৃদুমধু ঝঙ্কারে,
হাসি-ঢালা সুর গলিয়া পড়িবে
ক্ষণিক অশ্রুধারে।
রহিয়া রহিয়া যে পরশমণি ঝলকে অলককোণে
পলকের তরে সকরুণ করে বুলায়ো বুলায়ো মনে--
সোনা হয়ে যাবে সকল ভাবনা,
আঁধার হইবে আলা ॥
-
রাগ: ভৈরবী-কালাংড়া
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ ভাদ্র, ১৩১৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1908
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান --

আমার জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছ দান--
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই তার মূল্যের পরিমাণ॥
রজনীগন্ধা অগোচরে
যেমন রজনী স্বপনে ভরে সৌরভে,
তুমি জান নাই, তুমি জান নাই,
তুমি জান নাই, মরমে আমার ঢেলেছ
তোমার গান॥
বিদায় নেবার সময় এবার হল--
প্রসন্ন মুখ তোলো, মুখ তোলো,
মুখ তোলো--
মধুর মরণে পূর্ণ করিয়া সঁপিয়া যাব
প্রাণ চরণে।
যারে জান নাই, যারে জান নাই,
যারে জান নাই,
তার গোপন ব্যথার নীরব রাত্রি হোক
আজি অবসান॥
-
রাগ: রামকেলী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1345
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939

Friday, August 25, 2017

তোমার আনন্দ ওই গো তোমার আনন্দ ওই এল দ্বারে

তোমার আনন্দ ওই গো
তোমার আনন্দ ওই এল দ্বারে,
এল এল এল গো, ওগো
পুরবাসী।
বুকের আঁচলখানি সুখের আঁচলখানি--
দুখের আঁচলখানি ধুলায় পেতে আঙিনাতে মেলো
গো ॥
সেচন কোরো-- তার পথে পথে সেচন কোরো--
পা ফেলবে যেথায় সেচন কোরো গন্ধবারি,
মলিন না হয় চরণ তারি--
তোমার সুন্দর ওই গো--
তোমার সুন্দর ওই এল দ্বারে,
এল এল এল গো।
হৃদয়খানি--আকুল হৃদয়খানি সম্মুখে তার ছড়িয়ে
ফেলো--
রেখো না,  রেখো না গো ধরে,
ছড়িয়ে ফেলো ফেলো গো ॥
তোমার সকল ধন যে ধন্য হল হল গো।
বিশ্বজনের কল্যাণে আজ ঘরের দুয়ার--
ঘরের দুয়ার খোলো গো।
রাঙা হল-- রঙে রঙে রাঙা হল--
কার হাসির রঙে হেরো রাঙা হল সকল গগন,  
চিত্ত হল পুলক-মগন--
তোমার নিত্য আলো এল দ্বারে,
এল এল এল গো।
পরান প্রদীপ-- তোমার পরান-প্রদীপ তুলে ধোরো
ওই আলোতে-
রেখো না, রেখো না গো দূরে--
ওই আলোতে জ্বেলো গো॥
-
রাগ: পিলু
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৩ বৈশাখ, ১৩২১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৬ এপ্রিল, ১৯১৪
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

দিনের বিচার করো --

দিনের বিচার করো--
দিনশেষে তব সমুখে দাঁড়ানু ওহে জীবনেশ্বর।
দিনের কর্ম লইয়া স্মরণে সন্ধ্যাবেলায়
সঁপিনু চরণে--
কিছু ঢাকা নাই তোমার নয়নে,
এখন বিচার করো॥
মিথ্যা আচারে থাকি যদি মজি
আমার বিচার করো।
মিথ্যা দেবতা যদি থাকি ভজি,
আমার বিচার করো।
লোভে যদি কারে দিয়ে থাকি দুখ,
ভয়ে হয়ে থাকি ধর্মবিমুখ,
পরনিন্দায় পেয়ে থাকি সুখ,
আমার বিচার করো॥
অশুভকামনা করি যদি কার,
আমার বিচার করো।
রোষে যদি কারো করি অবিচার,
আমার বিচার করো।
তুমি যে জীবন দিয়েছ আমারে 
কলঙ্ক যদি দিয়ে থাকি তারে
আপনি বিনাশ করি আপনারে,
আমার বিচার করো॥
-
রাগ: পূরবী
তাল: অজ্ঞাত
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1305
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1899

বিশ্বরাজালয়ে বিশ্ববীণা বাজিছে

বিশ্বরাজালয়ে বিশ্ববীণা বাজিছে।
স্থলে জলে নভতলে বনে উপবনে
নদীনদে গিরি-গুহা-পারাবারে
নিত্য জাগে সরস সঙ্গীতমধুরিমা, নিত্য
নৃত্যরসভঙ্গিমা ॥
নববসন্তে নব আনন্দ-- উৎসব নব--
অতি মঞ্জুল, অতি মঞ্জুল, শুনি মঞ্জুল গুঞ্জন কুঞ্জে;
শুনি রে শুনি মর্মর পল্লবপুঞ্জে;
পিককূজনপুষ্পবনে বিজনে।
তব স্নিগ্ধসুশোভন লোচনলোভন
শ্যামসভাতলমাঝে
কলগীত সুললিত বাজে।
তোমার নিশ্বাসসুখপরশে উচ্ছ্বাসহরষে
পল্লবিত, মঞ্জরিত, গুঞ্জরিত, উল্লসিত সুন্দর ধরা।
দিকে দিকে তব বাণী-- নব নব তব গাথা--
অবিরল রসধারা ॥
-
রাগ: শঙ্করাভরণ (দক্ষিণী)
তাল: ঝাঁপতাল-কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1302
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1895
স্বরলিপিকার: সরলা দেবী,
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,
ইন্দিরা দেবী, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

এসো এসো প্রাণের উৎসবে, দক্ষিণবায়ুর বেণুরবে

এসো এসো  প্রাণের উৎসবে,
দক্ষিণবায়ুর বেণুরবে॥
পাখির প্রভাতী গানে এসো এসো পুণ্যস্নানে
আলোকের অমৃতনির্ঝরে॥
এসো এসো তুমি উদাসীন।
এসো এসো তুমি দিশাহীন।
প্রিয়েরে বরিতে হবে, বরমাল্য আনো তবে--
দক্ষিণা দক্ষিণ তব করে॥
দুঃখ আছে অপেক্ষিয়া দ্বারে--
বীর, তুমি বক্ষে লহো তারে।
পথের কণ্টক দলি এসো চলি, এসো চলি
ঝটিকার মেঘমন্দ্রস্বরে॥
-
রাগ: কালাংড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২২ মাঘ, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৫ ফেব্রুয়ারি,
১৩২৬
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

অগ্নিশিখা, এসো এসো, আনো আনো আলো

অগ্নিশিখা, এসো এসো, আনো আনো আলো।
দুঃখে সুখে ঘরে ঘরে গৃহদীপ জ্বালো॥
আনো শক্তি, আনো দীপ্তি, আনো শান্তি, আনো তৃপ্তি,
আনো স্নিগ্ধ ভালোবাসা, আনো নিত্য ভালো ॥
এসো পুণ্যপথ বেয়ে এসো হে কল্যাণী--
শুভ সুপ্তি, শুভ জাগরণ দেহো আনি।
দুঃখরাতে মাতৃবেশে    জেগে থাকো নির্নিমেষে
আনন্দ-উৎসবে তব শুভ্র হাসি ঢালো ॥
-
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৪ বৈশাখ, ১৩৩০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৭ এপ্রিল, ১৯২৩
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার

আয় আয় আয় আমাদের অঙ্গনে অতিথি বালক তরুদল

আয় আয় আয় আমাদের অঙ্গনে অতিথি বালক
তরুদল--
মানবের স্নেহসঙ্গ নে, চল্ আমাদের ঘরে চল্॥
শ্যাম বঙ্কিম ভঙ্গিতে   চঞ্চল
কলসঙ্গীতে
দ্বারে নিয়ে আয় শাখায় শাখায় প্রাণ-
আনন্দ-কোলাহল॥
তোদের নবীন পল্লবে নাচুক আলোক সবিতার,
দে পবনে বনবল্লভে মর্মরগীত-উপহার।
আজি শ্রাবণের বর্ষণে আশীর্বাদের
স্পর্শ নে,
পড়ুক মাথায় পাতায় পাতায়
অমরাবতীর ধারাজল॥
-
রাগ: খাম্বাজ
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২ শ্রাবণ, ১৩৩৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৮ জুলাই, ১৯২৯
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে

মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে হে প্রবল
প্রাণ।
          ধূলিরে ধন্য করো করুণার পুণ্যে হে কোমল
প্রাণ॥
মৌনী মাটির মর্মের গান কবে উঠিবে
ধ্বনিয়া মর্মর তব রবে,
মাধুরী ভরিবে ফুলে ফলে পল্লবে হে মোহন
প্রাণ॥
          পথিকবন্ধু, ছায়ার আসন পাতি   এসো
শ্যামসুন্দর।
          এসো বাতাসের অধীর খেলার সাথী,
মাতাও নীলাম্বর।
উষায় জাগাও শাখায় গানের আশা, সন্ধ্যায় আনো
বিরামগভীর ভাষা,
রচি দাও রাতে সুপ্ত গীতের বাসা হে
উদার প্রাণ॥
-
রাগ: মিশ্র কেদারা
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ বৈশাখ, ১৩৩২
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৮ মে, ১৯২৫
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন

আয় রে মোরা ফসল কাটি --

আয় রে মোরা ফসল কাটি--
ফসল কাটি, ফসল কাটি।
মাঠ আমাদের মিতা ওরে, আজ তারি
সওগাতে
মোদের ঘরের আঙন সারা বছর ভরবে দিনে রাতে॥
মোরা নেব তারি দান, তাই-যে কাটি ধান,
তাই-যে গাহি গান-- তাই-যে সুখে খাটি॥
বাদল এসে রচেছিল ছায়ার মায়াঘর,
রোদ এসেছে সোনার জাদুকর--
ও সে    সোনার জাদুকর।
শ্যামে সোনায় মিলন হল মোদের মাঠের মাঝে,
মোদের ভালোবাসার মাটি-যে তাই সাজল এমন
সাজে।
মোরা নেব তারি দান,   তাই-যে কাটি ধান,
তাই-যে গাহি গান-- তাই-যে সুখে খাটি॥
-
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): পৌষ, ১৩৩০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1924
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার

ফিরে চল্, ফিরে চল্, ফিরে চল্ মাটির টানে --

ফিরে চল্, ফিরে চল্, ফিরে চল্ মাটির টানে--
যে মাটি আঁচল পেতে চেয়ে আছে মুখের পানে॥
যার বুক ফেটে এই প্রাণ উঠেছে,
হাসিতে যার ফুল ফুটেছে রে,
ডাক দিল যে গানে গানে॥
দিক হতে ওই দিগন্তরে কোল রয়েছে
পাতা,
জন্মমরণ তারি হাতের অলখ সুতোয় গাঁথা।
ওর হৃদয়-গলা জলের ধারা সাগর-পানে
আত্মহারা রে
প্রাণের বাণী বয়ে আনে॥
-
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৩ ফাল্গুন, ১৩২৮
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ৭ মার্চ, ১৯২২
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন

এসো হে গৃহদেবতা

এসো হে গৃহদেবতা,
এ ভবন পুণ্যপ্রভাবে করো পবিত্র।
বিরাজো জননী, সবার জীবন ভরি--
দেখাও আদর্শ মহান চরিত্র॥
শিখাও করিতে ক্ষমা, করো হে ক্ষমা,
জাগায়ে রাখো মনে তব উপমা,
দেহো ধৈর্য হৃদয়ে--
সুখে দুখে সঙ্কটে অটল চিত্ত॥
দেখাও রজনী-দিবা   বিমল বিভা,
বিতরো পুরজনে শুভ্র প্রতিভা--
নব শোভাকিরণে
করো গৃহ সুন্দর রম্য বিচিত্র।
সবে করো প্রেমদান পূরিয়া প্রাণ--
ভুলায়ে রাখো, সখা, আত্মাভিমান।
সব বৈর হবে দূর
তোমারে বরণ করি জীবনমিত্র॥
-
রাগ: আনন্দ-ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1300
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1894

ওহে নবীন অতিথি, তুমি নূতন কি তুমি চিরন্তন

ওহে নবীন অতিথি, তুমি নূতন কি তুমি চিরন্তন।
যুগে যুগে কোথা তুমি ছিলে সঙ্গোপন॥
যতনে কত-কী আনি বেঁধেছিনু গৃহখানি,
হেথা কে তোমারে বলো করেছিল নিমন্ত্রণ॥
কত আশা ভালোবাসা গভীর হৃদয়তলে
ঢেকে রেখেছিনু বুকে কত হাসি-অশ্রুজলে।
একটি না কহি বাণী তুমি এলে মহারানী,
কেমনে গোপনে মনে করিলে হে পদার্পণ॥
-
রাগ: পিলু
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1294
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1887
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

সবারে করি আহ্বান --

সবারে করি আহ্বান--
এসো উৎসুকচিত্ত, এসো আনন্দিত প্রাণ॥
হৃদয় দেহো পাতি, হেথাকার দিবা রাতি
করুক নবজীবনদান॥
আকাশে আকাশে বনে বনে
তোমাদের মনে মনে
বিছায়ে বিছায়ে দিবে গান।
সুদূরের পাদপীঠতলে     যেখানে কল্যাণদীপ জ্বলে
সেথা পাবে স্থান॥
-
রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: অনাদিকুমার দস্তিদার 

সুধাসাগরতীরে হে, এসেছে নরনারী সুধারসপিয়াসে

সুধাসাগরতীরে হে, এসেছে নরনারী
সুধারসপিয়াসে॥
        শুভ বিভাবরী, শোভাময়ী ধরণী,
নিখিল গাহে আজি আকুল আশ্বাসে॥
গগনে বিকাশে তব প্রেমপূর্ণিমা,
মধুর বহে তব কৃপাসমীরণ।
আনন্দতরঙ্গ উঠে দশ দিকে,
মন প্রাণ মগ্ন অমৃত-উচ্ছ্বাসে॥
-
রাগ: নায়েকী কানাড়া
তাল: ধামার
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1303
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1896
স্বরলিপিকার: কাঙ্গালীচরণ সেন

যে তরণীখানি ভাসালে দুজনে আজি

যে তরণীখানি ভাসালে দুজনে আজি,
হে নবীন সংসারী,
কাণ্ডারী কোরো তাঁহারে তাহার
যিনি এ ভবের কাণ্ডারী॥
কালপারাবার যিনি চিরদিন করিছেন পার
বিরামবিহীন
শুভযাত্রায় আজি তিনি দিন প্রসাদপবন
সঞ্চারি॥
নিয়ো নিয়ো চিরজীবনপাথেয়,
ভরি নিয়ো তরী কল্যাণে।
সুধে দুখে শোকে আঁধারে আলোকে
যেয়ো অমৃতের সন্ধানে।
বাঁধা নাহি থেকো আলসে আবেশে,
ঝড়ে ঝঞ্ঝায় চলে যেয়ো হেসে,
তোমাদের প্রেম দিয়ো দেশে দেশে
বিশ্বের মাঝে বিস্তারি॥
-
রাগ: বেহাগ
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1310
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1903
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

দুজনে যেথায় মিলিছে সেথায় তুমি থাকো

দুজনে যেথায় মিলিছে সেথায় তুমি থাকো,
প্রভু, তুমি থাকো।
দুজনে যাহারা চলেছে তাদের তুমি রাখো,
প্রভু, সাথে রাখো ॥
যেথা দুজনের মিলিছে দৃষ্টি সেথা হোক তব সুধার
বৃষ্টি--
দোঁহে যারা ডাকে দোঁহারে তাদের তুমি ডাকো,
প্রভু, তুমি ডাকো ॥
দুজনে মিলিয়া গৃহের প্রদীপে জ্বালাইছে
যে আলোক
তাহাতে, হে দেব, হে বিশ্বদেব, তোমারি
আরতি হোক॥
মধুর মিলনে মিলি দুটি হিয়া প্রেমের বৃন্তে উঠে
বিকশিয়া,
সকল অশুভ হইতে তাহারে তুমি ঢাকো,
প্রভু, তুমি ঢাকো ॥
-
রাগ: সিন্ধু-ভৈরবী
তাল: অজ্ঞাত
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1310
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1903

শুভদিনে এসেছে দোঁহে চরণে তোমার

শুভদিনে এসেছে দোঁহে চরণে তোমার,
শিখাও প্রেমের শিক্ষা, কোথা যাবে আর॥
যে প্রেম সুখেতে কভু মলিন না হয়, প্রভু,
যে প্রেম দুঃখেতে ধরে উজ্জ্বল আকার॥
যে প্রেম সমান ভাবে রবে চিরদিন,
নিমেষে নিমেষে যাহা হইবে নবীন।
যে প্রেমের শুভ্র হাসি    প্রভাতকিরণরাশি,
যে প্রেমের অশ্রুজল শিশির উষার॥
যে প্রেমের পথ গেছে অমৃতসদনে
সে প্রেম দেখায়ে দাও পথিক-দুজনে।
যদি কভু শ্রান্ত হয় কোলে নিয়ো দয়াময়--
যদি কভু পথ ভোলে দেখায়ো আবার॥
-
রাগ: বেহাগ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1288
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1881

দুই হৃদয়ের নদী একত্র মিলিল

দুই হৃদয়ের নদী একত্র মিলিল যদি
বলো, দেব, কার পানে আগ্রহে ছুটিয়া যায়॥
সম্মুখে রয়েছে তার        তুমি প্রেমপারাবার,
তোমারি অনন্তহৃদে দুটিতে মিলাতে চায়॥
সেই এক আশা করি দুইজনে মিলিয়াছে,
সেই এক লক্ষ্য ধরি দুইজনে চলিয়াছে।
পথে বাধা শত শত, পাষাণ পর্বত কত,
দুই বলে এক হয়ে ভাঙিয়া ফেলিবে তায়॥
অবশেষে জীবনের মহাযাত্রা ফুরাইলে
তোমারি স্নেহের কোলে যেন গো আশ্রয় মিলে,
দুটি হৃদয়ের সুখ দুটি হৃদয়ের দুখ
দুটি হৃদয়ের আশা মিলায় তোমার পায়॥
-
রাগ: সাহানা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1288
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1881

সুখে থাকো আর সুখী করো সবে

সুখে থাকো আর সুখী করো সবে,
তোমাদের প্রেম ধন্য হোক ভবে॥
মঙ্গলের পথে থেকো নিরন্তর,
মহত্ত্বের 'পরে রাখিয়ো নির্ভর--
ধ্রুবসত্য তাঁরে ধ্রুবতারা কোরো সংশয়নিশীথে
সংসার-অর্ণবে॥
চিরসুধাময় প্রেমের মিলন
মধুর করিয়া রাখুক জীবন,
দুজনার বলে সবল দুজন
জীবনের কাজ সাধিয়ো নীরবে॥
              কত দুঃখ আছে, কত অশ্রুজল--
প্রেমবলে তবু থাকিয়ো অটল।
তাঁহারি ইচ্ছা হউক সফল বিপদে
সম্পদে শোকে উৎসবে॥
-
রাগ: কীর্তন
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২০ বৈশাখ, ১২৯৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ২ মে, ১৮৮৯
রচনাস্থান: খিরকী, পুনে

দুটি প্রাণ এক ঠাঁই তুমি তো এনেছ ডাকি

দুটি প্রাণ এক ঠাঁই তুমি তো এনেছ ডাকি,
শুভকার্যে জাগিতেছে তোমার প্রসন্ন আঁখি॥
এ জগতচরাচরে বেঁধেছ যে প্রেমডোরে
সে প্রেমে বাঁধিয়া দোঁহে স্নেহছায়ে রাখো
ঢাকি॥
তোমারি আদেশ লয়ে সংসারে পশিবে দোঁহে,
তোমারি আশিস বলে এড়াইবে মায়ামোহে।
সাধিতে তোমার কাজ         দুজনে চলিবে আজ,
হৃদয়ে মিলাবে হৃদি তোমারে হৃদয়ে রাখি॥
-
রাগ: সাহানা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

উজ্জ্বল করো হে আজি এ আনন্দরাতি

উজ্জ্বল করো হে আজি এ আনন্দরাতি
বিকাশিয়া তোমার আনন্দমুখভাতি।
সভা-মাঝে তুমি আজ বিরাজো হে রাজরাজ,
আনন্দে রেখেছি তব সিংহাসন পাতি॥
সুন্দর করো, হে প্রভু, জীবন যৌবন
তোমারি মাধুরীসুধা করি বরিষন।
লহো তুমি লহো তুলে তোমারি চরণমূলে
নবীন মিলনমালা প্রেমসূত্রে গাঁথি॥
মঙ্গল করো হে, আজি মঙ্গলবন্ধন
তব শুভ আশীর্বাদ করি বিতরণ।
বরিষ হে ধ্রুবতারা, কল্যাণকিরণধারা--
দুর্দিনে সুদিনে তুমি থাকো চিরসাথী॥
-
রাগ: ভূপালী
তাল: অজ্ঞাত
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ৯ বৈশাখ, ১৩০৩
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1896

দুইটি হৃদয়ে একটি আসন

দুইটি হৃদয়ে একটি আসন পাতিয়া বসো হে হৃদয়নাথ।
কল্যাণকরে মঙ্গলডোরে বাঁধিয়া রাখো হে দোঁহার হাত॥
প্রাণেশ, তোমার প্রেম অনন্ত   জাগাক হৃদয়ে
চিরবসন্ত,
যুগল প্রাণের মধুর মিলনে করো হে করুণনয়নপাত॥
সংসারপথ দীর্ঘ দারুণ, বাহিরিবে দুটি পান্থ
তরুণ,
আজিকে তোমার প্রসাদ-অরুণ   করুক প্রকাশ নব
প্রভাত।
তব মঙ্গল, তব মহত্ত্ব,   তোমারি মাধুরী, তোমারি
সত্য--
দোঁহার চিত্তে রহুক নিত্য নব নব রূপে দিবস-রাত॥
-
রাগ: সাহানা
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1304
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1898
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

পাখি, তোর সুর ভুলিস নে --

পাখি, তোর সুর ভুলিস নে--
আমার প্রভাত হবে বৃথা
জানিস কি তা।
অরুণ-আলোর করুণ পরশ
গাছে গাছে লাগে,
কাঁপনে তার তোরই যে সুর
জাগে--
তুই ভোরের আলোর মিতা
জানিস কি তা।
আমার জাগরণের মাঝে
রাগিণী তোর মধুর বাজে
জানিস কি তা।
আমার রাতের স্বপন-তলে
প্রভাতী তোর কী যে বলে
নবীন প্রাণের গীতা
জানিস কি তা॥
-
রাগ: অজ্ঞাত
তাল: অজ্ঞাত
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1347
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ডিসেম্বর, ১৯৪০

প্রভাত হইল নিশি কানন ঘুরে

প্রভাত হইল নিশি কানন ঘুরে,
বিরহ-বিধুর হিয়া মরিল ঝুরে।
ম্লান শশী অস্ত গেল ম্লান হাসি মিলাইল
কাঁদি উঠিল প্রাণ কাতর সুরে।
চল্ সখী চল্ তবে ঘরেতে ফিরে
যাক ভেসে ম্লান আঁখি নয়ন-নীরে।
যাক ফেটে শূন্য প্রাণ, হোক্ আশা অবসান,
হৃদয় যাহারে ডাকে থাক্ সে দূরে।
-
রাগ: বিভাস-কালাংড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,
ইন্দিরা দেবী

Thursday, August 24, 2017

আমি রূপে তোমায় ভোলাব না

আমি রূপে তোমায় ভোলাব না,
ভালোবাসায় ভোলাব।
আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলব না গো,
গান দিয়ে দ্বার খোলাব॥
ভরাব না ভূষণভারে,
সাজাব না ফুলের হারে–
প্রেমকে আমার মালা করে গলায়
তোমার দোলাব॥
জানবে না কেউ কোন্ তুফানে তরঙ্গদল
নাচবে প্রাণে,
চাঁদের মতো অলখ টানে
জোয়ারে ঢেউ তোলাব॥
.
রাগ: কীর্তন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

না সজনী, না, আমি জানি জানি, সে আসিবে না

না সজনী, না, আমি জানি জানি, সে আসিবে না।
এমনি কাঁদিয়ে পোহাইবে যামিনী,বাসনা তবু পূরিবে না।
জনমেও এ পোড়া ভালে কোনো আশা মিটিল না।।
যদি বা সে আসে,সখী,কী হবে আমার তায়।
সে তো মোরে, সজনী লো, ভালো কভু বাসে না
— জানি লো।
ভালো ক’রে কবে না কথা,চেয়েও না দেখিবে—
বড়ো আশা করে শেষে পূরিবে না কামনা।।
-
রাগ: মিশ্র আশাবরী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885

ছি ছি সখা,কী করিলে, কোন্ প্রাণে পরশিলে

ছি ছি সখা,কী করিলে, কোন্ প্রাণে পরশিলে—
কামিনীকুসুম ছিল বন আলো করিয়া।
মানুষ-পরশ-ভরে শিহরিয়া সকাতরে
ওই-যে শতধা হয়ে পড়িল গো ঝরিয়া।
জান তো কামিনী-
সতী কোমল কুসুম অতি—
দূর হতে দেখিবার,ছুঁইবার নহে সে।
দূর হতে মৃদু বায় গন্ধ তার দিয়ে যায়,
কাছে গেল মানুষের শ্বাস নাহি সহে সে।
মধুপের পদক্ষেপে পড়িতেছে কেঁপে কেঁপে,
কাতর হতেছে কত প্রভাতের সমীরে।
পরশিতে রবিকর শুকাইছে কলেবর,
শিশিরের ভরটুকু সহিছে না শরীরে।
হেন কোমলতাময় ফুল কি না ছুঁলে নয়—
হায় রে কেমন বন ছিল আলো করিয়া।
মানুষ-পরশ-ভরে শিহরিয়া সকাতরে
ওই-যে শতধা হয়ে পড়িল গো ঝরিয়া।।
-
রাগ: ছায়ানট
তাল: অজ্ঞাত
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1287
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1880

সখা, মোদের বেঁধে রাখো প্রেমডোরে

সখা, মোদের বেঁধে রাখো প্রেমডোরে।
আমাদের ডেকে নিয়ে চরণতলে রাখো ধ’রে—
         বাঁধো হে প্রেমডোরে।
কঠোর পরানে কুটিল বয়ানে
তোমার এ প্রেমের রাজ্য রেখেছি আঁধার ক’রে।
আপনার অভিমানে দুয়ার দিয়ে প্রাণে
গরবে আছি বসে চাহি আপনা-পানে।
বুঝি এমনি করে হারাব তোমারে—
ধূলিতে লুটাইব আপনার পাষাণভারে।
তখন কারে ডেকে কাঁদিব কাতর স্বরে।।
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: অজ্ঞাত
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1884

সকলের কাছে ডাকি আনন্দ

সকলের কাছে ডাকি আনন্দ-আলয়ে থাকি
অমৃত করিছ বিতরণ।
পাইয়া অনন্ত প্রাণ জগত গাহিছে গান
গগনে করিয়া বিচরণ।
সূর্য শূন্যপথে ধায়— বিশ্রাম সে নাহি চায়,
সঙ্গে ধায় গ্রহপরিজন।
লভিয়া অসীম বল ছুটেছে নক্ষত্রদল,
চারি দিকে চলেছে কিরণ।
পাইয়া অমৃতধারা নব নব গ্রহ তারা
বিকশিয়া উঠে অনুক্ষণ—
জাগে নব নব প্রাণ, চিরজীবনের গান
পূরিতেছে অনন্ত গগন।
পূর্ণ লোক লোকান্তর, প্রাণে মগ্ন চরাচর
প্রাণের সাগরে সন্তরণ।
জগতে যে দিকে চাই বিনাশ বিরাম নাই,
অহরহ চলে যাত্রীগণ।
মোরা সবে কীটবৎ, সমুখে অনন্ত পথ
কী করিয়া করিব ভ্রমণ।
অমৃতের কণা তব পাথেয় দিয়েছ,প্রভো,
ক্ষুদ্র প্রাণে অনন্ত জীবন।।
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

নিত্য সত্য চিন্তন করো রে বিমলহৃদয়ে

নিত্য সত্য চিন্তন করো রে বিমলহৃদয়ে,
নির্মল অচল সুমতি রাখো ধরি সতত।।
সংশয়নৃশংস সংসারে প্রশান্ত রহো,
তাঁর শুভ ইচ্ছা স্মরি বিনয়ে রহো বিনত।।
বাসনা করো জয়, দূর করো ক্ষুদ্র ভয়।
প্রাণধন করিয়া পণ চলো কঠিন শ্রেয়পথে,
ভোলো প্রসন্নমুখে স্বার্থসুখ,আত্মদুখ—
প্রেম-আনন্দরসে নিয়ত রহো নিরত।।
-
রাগ: আড়ানা
তাল: ঝাঁপতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1304
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1897

সখা, তুমি আছ কোথা —

সখা, তুমি আছ কোথা—
সারা বরষের পরে জানাতে এসেছি ব্যথা।।
কত মোহ,কত পাপ, কত শোক, কত তাপ,
কত যে সয়েছি আমি তোমারে কব সে কথা।।
যে শুভ্র জীবন তুমি মোরে দিয়েছিলে সখা,
দেখো আজি তাহে কত পড়েছে কলঙ্করেখা।।
এনেছি তোমারি কাছে, দাও তাহা দাও মুছে—
নয়নে ঝরিছে বারি, সভয়ে এদেছি পিতা।।
দেখো দেব,চেয়ে দেখো হৃদয়েতে নাহি বল—
সংসারের বায়ুবেগে করিতেছে টলমল।
লহো সে হৃদয় তুলে, রাখো তব পদমূলে—
সারাটি বরষ যেন নির্ভয়ে রহে গো সেথা।।
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1290
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1883
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

মা,আমি তোর কী করেছি

মা,আমি তোর কী করেছি।
শুধু তোরে জন্ম ভ’রে মা বলে রে ডেকেছি।।
চিরজীবন পাষাণী রে, ভাসালি আঁখিনীরে —
              চিরজীবন দুঃখানলে দহেছি।।
        আঁধার  দেখে তরাসেতে       চাহিলাম তোর কোলে যেতে —
সন্তানেরে কোলে তুলে নিলি নে।
মা-হারা সন্তানের মতো কেঁদে বেড়াই অবিরত —
এ চোখের জল মুছায়ে তো দিলি নে।
        ছেলের প্রাণে ব্যথা দিয়ে       যদি,মা,তোর জুড়ায় হিয়ে
              ভালো ভালো,তাই তবে হোক—
                   অনেক দুঃখ সয়েছি।।
-
রাগ: মিশ্র বারোয়াঁ
তাল: আড়াঠেকা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1289
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1882

ওহে দয়াময়, নিখিল-আশ্রয় এ ধরা-পানে চাও

ওহে দয়াময়, নিখিল-আশ্রয়  এ ধরা-পানে চাও—
পতিত যে জন করিছে রোদন, পতিতপাবন,
       তাহারে উঠাও।
মরণে যে জন করেছে বরণ  তাহারে বাঁচাও।।
কত দুখ শোক,কাঁদে কত লোক,নয়ন মুছাও।
ভাঙিয়া আলয় হেরে শূন্যময়। কোথায় আশ্রয়—
       তারে ঘরে ডেকে নাও।
প্রেমের তৃষায় হৃদয় শুকায়, দাও প্রেমসুধা দাও।।
হেরো কোথা যায়, কার পানে চায়। নয়নে আঁধার—
নাহি হেরে দিক, আকুল পথিক চাহে চারি ধার।
এ ঘোর গহনে অন্ধ সে নয়নে তোমার কিরণে
       আঁধার ঘুচাও।
সঙ্গহারা জনে রাখিয়া চরণে বাসনা পূরাও।।
কলঙ্কের রেখা প্রাণে দেয় দেখা প্রতিদিন হায়।
হৃদয় কঠিন হল দিন দিন, লজ্জা দূরে যায়।
দেহো গো বেদনা,করাও চেতনা! রেখো না,রেখো না —
       এ পাপ তাড়াও
সংসারের রণে পরাজিত জনে নববল দাও।।
-
রাগ: বিলাতি ভাঙা
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1291
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1885
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী