Thursday, September 21, 2017

আমি আশায় আশায় থাকি

আমি আশায় আশায় থাকি।
আমার তৃষিত-আকুল আঁখি॥
ঘুমে-জাগরণে-মেশা প্রাণে স্বপনের নেশা--
দূর দিগন্তে চেয়ে কাহারে ডাকি॥
বনে বনে করে কানাকানি অশ্রুত বাণী,
কী গাহে পাখি।
কী কব না পাই ভাষা, মোর জীবন রঙিন
কুয়াশা ফেলেছে ঢাকি।
-
রাগ: কাফি-কানাড়া
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

Wednesday, September 20, 2017

মোর বীণা ওঠে কোন্ সুরে বাজি

মোর বীণা ওঠে কোন্ সুরে বাজি 
কোন্ নব চঞ্চল ছন্দে।
মম অন্তর কম্পিত আজি নিখিলের হৃদয়স্পন্দে॥
আসে কোন্ তরুণ অশান্ত, উড়ে বসনাঞ্চলপ্রান্ত,
আলোকের নৃত্যে বনান্ত মুখরিত অধীর আনন্দে।
অম্বরপ্রাঙ্গনমাঝে নিঃস্বর মঞ্জীর গুঞ্জে।
অশ্রুত সেই তালে বাজে  করতালি পল্লবপুঞ্জে।
কার পদপরশন-আশা  তৃণে তৃণে অর্পিল ভাষা,
সমীরণ বন্ধনহারা  উন্মন কোন্ বনগন্ধে॥
-
রাগ: ভৈরবী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): বৈশাখ, ১৩২৬
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1919
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার সকল দুখের প্রদীপ

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে
দিবস গেলে করব নিবেদন--
আমার   ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥
যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায়
আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন--
আমার   ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা,
বাঁধা বেদন-ডোরে,
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে।
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে
একে একে তারা,
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন--
আমার   ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
-
রাগ: মিশ্র ভীমপলশ্রী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

Tuesday, September 19, 2017

দিবস রজনী, আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি

দিবস রজনী, আমি যেন কার
আশায় আশায় থাকি।
(তাই) চমকিত মন, চকিত শ্রবণ,
তৃষিত আকুল আঁখি।
চঞ্চল হয়ে ঘুরিয়ে বেড়াই,
সদা মনে হয় যদি দেখা পাই,
"কে আসিছে" বলে চমকিয়ে চাই
কাননে ডাকিলে পাখি।
জাগরণে তারে না দেখিতে পাই,
থাকি স্বপনের আশে,
ঘুমের আড়ালে যদি ধরা দেয়,
বাঁধিব স্বপনপাশে।
এত ভালোবাসি, এত যারে চাই,
মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই,
যেন এ বাসনা ব্যাকুল আবেগে,
তাহারে আনিবে ডাকি।
-
রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,
ইন্দিরা দেবী

Sunday, September 17, 2017

প্রাণ চায় চক্ষু না চায়

প্রাণ চায় চক্ষু না চায়, মরি
একি তোর দুস্তরলজ্জা।
সুন্দর এসে ফিরে যায়, তবে
কার লাগি মিথ্যা এ সজ্জা॥
মুখে নাহি নিঃসরে ভাষ, দহে
অন্তরে নির্বাক বহ্নি।
ওষ্ঠে কী নিষ্ঠুর হাস, তব
মর্মে যে ক্রন্দন তন্বী!
মাল্য যে দংশিছে হায়, তব
শয্যা যে কণ্টকশয্যা
মিলনসমুদ্রবেলায় চির-বিচ্ছেদজর্জর মজ্জা॥
-
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914

Tuesday, September 12, 2017

তোমায় গান শোনাব

তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ
ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া
বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক'
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে,
তরী এল তীরে
শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
আমার কাজের মাঝে মাঝে
কান্নাহাসির দোলা তুমি থামতে দিলে না যে।
আমার পরশ ক'রে প্রাণ সুধায় ভ'রে
তুমি যাও যে সরে--
বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক
ওগো দুখজাগানিয়া ॥
-
রাগ: পিলু
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৯ ফাল্গুন, ১৩২৯
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১৩ মার্চ, ১৯২৩
রচনাস্থান: আমেদাবাদ
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভালোবেসে দুখ সে ও সুখ

ভালোবেসে দুখ সে-ও সুখ, সুখ নাহি আপনাতে।
না না না, সখা, ভুলি নে ছলনাতে।
মন দাও দাও দাও সখী দাও পরের হাতে।
না না না, মোরা ভুলি নে ছলনাতে।
সুখের শিশির নিমেষে শুকায়, সুখ চেয়ে দুখ ভালো,
আনো, সজল বিমল প্রেম ছল ছল নলিন নয়ন-পাতে।
না না না, মোরা ভুলি নে ছলনাতে।
রবির কিরণে ফুটিয়া নলিনী আপনি টুটিয়া যায়,
সুখ পায় তায় সে।
চির-কলিকা-জনম, কে করে বহন চির-শিশির রাতে।
না না না, মোরা ভুলি নে ছলনাতে।
-
রাগ: পিলু-ভীমপলশ্রী-কীর্তন
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর,
ইন্দিরা দেবী

আকাশে আজ কোন্ চরণের আসা যাওয়া

আকাশে আজ কোন্ চরণের আসা-যাওয়া
বাতাসে আজ কোন্ পরশের লাগে হাওয়া ॥
অনেক দিনের বিদায়বেলায় ব্যাকুল বাণী
আজ উদাসীর বাঁশির সুরে কে দেয় আনি--
বনের ছায়ায় তরুণ চোখের করুণ চাওয়া ॥
কোন্ ফাগুনে যে ফুল ফোটা হল সারা
মৌমাছিদের পাখায় পাখায় কাঁদে তারা।
বকুলতলায় কাজ-ভোলা সেই কোন্ দুপুরে
যে-সব কথা ভাসিয়ে দিলেম গানের সুরে
ব্যথায় ভ'রে ফিরে আসে সে গান-গাওয়া

Monday, September 11, 2017

আমার পরান যাহা চায়

আমার পরান যাহা চায়,
তুমি তাই, তুমি তাই গো।
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর, কেহ নাই কিছু নাই গো।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও,
যাও, সুখের সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে,
আর কিছু নাহি চাই গো।
আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিব বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী,
দীর্ঘ বরষ মাস।
যদি আর কারে ভালোবাস,
যদি আর ফিরে নাহি আস,
তবে, তুমি যাহা চাও, তাই যেন পাও,
আমি যত দুখ পাই গো।
-
রাগ: পিলু
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর

Wednesday, September 6, 2017

ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে ওরে পাখি

ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে ওরে পাখি,
যা উড়ে,যা উড়ে,যা রে একাকী।
বাজবে তোর পায়ে সেই বন্ধ,
পাখাতে পাবি আনন্দ—
দিশাহারা মেঘ যে গেল ডাকি।
নির্মল দুঃখে যে সেই তো মুক্তি
নির্মল শূন্যের প্রেমে।
আত্মবিড়ম্বন দারুন লজ্জা,
নিঃশেষে যাক সে থেমে।
দুরাশার মরাবাঁচায় এতদিন ছিলি
তোর খাঁচায়—
ধূলিতলে যাবি রাখি॥
-
রাগ: কাফি
তাল: ষষ্ঠী
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1345
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1938
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

Monday, September 4, 2017

দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে

দাঁড়িয়ে আছ তুমি আমার গানের ও পারে--
আমার  সুরগুলি পায় চরণ, আমি পাই নে তোমারে ॥
বাতাস বহে মরি মরি, আর বেঁধে রেখো না তরী--
এসো এসো পার হয়ে মোর হৃদয়মাঝারে ॥
তোমার সাথে গানের খেলা দূরের খেলা যে,
বেদনাতে বাঁশি বাজায় সকল বেলা যে।
কবে নিয়ে আমার বাঁশি বাজাবে গো আপনি আসি
আনন্দময় নীরব রাতের নিবিড় আঁধারে ॥
-
রাগ: ইমন
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1320
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী,
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

Sunday, September 3, 2017

এত আলো জ্বালিয়েছ এই গগনে

এত আলো জ্বালিয়েছ এই গগনে
কী উৎসবের লগনে॥
সব আলোটি কেমন ক'রে
ফেল আমার মুখের 'পরে,
তুমি আপনি থাকো আলোর পিছনে ॥
প্রেমটি যেদিন জ্বালি হৃদয়-গগনে
কী উৎসবের লগনে
সব আলো তার কেমন ক'রে
পড়ে তোমার মুখের 'পরে,
আমি আপনি পড়ি আলোর পিছনে ॥
-
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1320
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

এত আলো জ্বালিয়েছ এই গগনে

এত আলো জ্বালিয়েছ এই গগনে
কী উৎসবের লগনে॥
সব আলোটি কেমন ক'রে
ফেল আমার মুখের 'পরে,
তুমি আপনি থাকো আলোর পিছনে ॥
প্রেমটি যেদিন জ্বালি হৃদয়-গগনে
কী উৎসবের লগনে
সব আলো তার কেমন ক'রে
পড়ে তোমার মুখের 'পরে,
আমি আপনি পড়ি আলোর পিছনে ॥
-
রাগ: ভৈরবী-বাউল
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1320
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে

তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে।
এসো গন্ধে বরনে, এসো গানে।
এসো অঙ্গে পুলকময় পরশে,
এসো চিত্তে অমৃতময় হরষে,
এসো মুগ্ধ মুদিত দু নয়ানে॥
এসো নির্মল উজ্জ্বল কান্ত,
এসো সুন্দর স্নিগ্ধ প্রশান্ত,
এসো এসো হে বিচিত্র বিধানে।
এসো দু:খে সুখে, এসো মর্মে,
এসো নিত্য নিত্য সব কর্মে;
এসো সকল-কর্ম-অবসানে॥
-
রাগ: রামকেলী
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৬ ভাদ্র, ১৩০১
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): ১০ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪
রচনাস্থান: পতিসর

পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে

পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥
চেনাশোনার কোন্ বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে
সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥
ঘরের মুখে আর কি রে কোনো দিন সে যাবে ফিরে।
যাবে না, যাবে না--
দেয়াল যত সব গেল টুটে॥
বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা কোন্ বলরামের আমি চেলা,
আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে--
যত মাতাল জুটে।
যা না চাইবার তাই আজি চাই গো,
যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো।
পাব না, পাব না,
মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥
-
রাগ: বাউল
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1346
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1939
স্বরলিপিকার: শৈলজারঞ্জন মজুমদার

খোলো খোলো দ্বার

খোলো খোলো দ্বার, রাখিয়ো না আর
বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে।
দাও সাড়া দাও,      এই দিকে চাও
এসো দুই বাহু বাড়ায়ে॥
কাজ হয়ে গেছে সারা, উঠেছে সন্ধ্যাতারা,
আলোকের খেয়া    হয়ে গেল দেয়া
অস্তসাগর পারায়ে॥
ভরি লয়ে ঝারি      এনেছি তো বারি
সেজেছি তো শুচি দুকূলে,
বেঁধেছি তো চুল,   তুলেছি তো ফুল
গেঁথেছি তো মালা মুকুলে।
ধেনু এল গোঠে ফিরে,  পাখিরা এসেছে নীড়ে,
পথ ছিল যত    জুড়িয়া জগত
আঁধারে গিয়েছে হারায়ে॥
-
রাগ: ইমনকল্যাণ
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1317
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1910
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

Saturday, September 2, 2017

আমার হিয়ার মাঝে

আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে
দেখতে আমি পাই নি।
তোমায় দেখতে আমি পাই নি।
বাহির-পানে চোখ মেলেছি,
আমার হৃদয়-পানে চাই নি ॥
আমার সকল ভালোবাসায় সকল
আঘাত সকল আশায়
তুমি ছিলে আমার কাছে,
তোমার কাছে যাই নি ॥
তুমি মোর আনন্দ হয়ে ছিলে আমার খেলায়--
আনন্দে তাই ভুলেছিলেম,
কেটেছে দিন হেলায়।
গোপন রহি গভীর প্রাণে আমার
দুঃখসুখের গানে সুর দিয়েছ তুমি,
আমি তোমার গান তো গাই নি ॥
-
রাগ: পিলু
তাল: একতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): ২৫ চৈত্র, ১৩২০
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: কলকাতার পথে রেলগাড়িতে
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী,
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজি এ প্রভাতে রবির কর - নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ

আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের 'পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে
প্রভাত-পাখির গান।
না জানি কেন রে এতদিন পরে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ
রুধিয়া রাখিতে নারি।
থর থর করি কাঁপিছে ভূধর,
শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে,
ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল
গরজি উঠিছে দারুণ রোষে।
হেথায় হোথায় পাগলের প্রায়
ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায়,
বাহিরিতে চায়, দেখিতে না পায়
কোথায় কারার দ্বার।
-
- প্রভাতসংগীত - (নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ)
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মোর প্রভাতের এই প্রথম খনের কুসুমখানি

মোর প্রভাতের এই প্রথম খনের কুসুমখানি
তুমি জাগাও তারে ওই নয়নের আলোক হানি ॥
সে যে দিনের বেলায় করবে খেলা হাওয়ায় দুলে,
রাতের অন্ধকারে নেবে তারে বক্ষে তুলে--
ওগো তখনি তো গন্ধে তাহার ফুটবে বাণী ॥
আমার বীণাখানি পড়ছে আজি সবার চোখে,
হেরো তারগুলি তার দেখছে গুনে সকল লোকে।
ওগো কখন সে যে সভা ত্যেজে আড়াল হবে,
শুধু সুরটুকু তার উঠবে বেজে করুণ রবে--
যখন তুমি তারে বুকের 'পরে লবে টানি ॥
-
রাগ: রামকেলী
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): 1321
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1914
রচনাস্থান: শান্তিনিকেতন
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

Friday, September 1, 2017

কে ডাকে! আমি কভু ফিরে নাহি চাই

কে ডাকে! আমি কভু ফিরে নাহি চাই।
কত ফুল ফুটে উঠে, কত ফুল যায় টুটে,
আমি শুধু বহে চলে যাই।
পরশ পুলক-রস ভরা রেখে যাই,
নাহি দিই ধরা।
উড়ে আসে ফুলবাস, লতাপাতা ফেলে শ্বাস,
বনে বনে উঠে হা-হুতাশ,
চকিতে শুনিতে শুধু পাই,
চলে যাই।
আমি কভু ফিরে নাহি চাই।
-
রাগ: পরজ
তাল: ত্রিতাল
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে করব নিবেদন --

আমার সকল দুখের প্রদীপ জ্বেলে
দিবস গেলে করব নিবেদন--
আমার   ব্যথার পূজা হয় নি সমাপন ॥
যখন বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায়
আপন কুলায়-মাঝে,
সন্ধ্যাপূজার ঘণ্টা যখন বাজে,
তখন আপন শেষ শিখাটি জ্বালবে এ জীবন--
আমার   ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
অনেক দিনের অনেক কথা, ব্যাকুলতা,
বাঁধা বেদন-ডোরে,
মনের মাঝে উঠেছে আজ ভ'রে।
যখন পূজার হোমানলে উঠবে জ্বলে
একে একে তারা,
আকাশ-পানে ছুটবে বাঁধন-হারা,
অস্তরবির ছবির সাথে মিলবে আয়োজন--
আমার ব্যথার পূজা হবে সমাপন ॥
-
রাগ: মিশ্র ভীমপলশ্রী
তাল: কাহারবা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): আশ্বিন, ১৩২৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1918
স্বরলিপিকার: দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর

সখী, বহে গেল বেলা, শুধু হাসিখেলা

সখী, বহে গেল বেলা, শুধু হাসিখেলা,
এ কি আর ভালো লাগে!
আকুল তিয়াষ, প্রেমের পিয়াস,
প্রাণে কেন নাহি জাগে!
কবে আর হবে থাকিতে জীবন
আঁখিতে আঁখিতে মদির মিলন,
মধুর হুতাশে মধুর দহন,
নিত-নব অনুরাগে।
তরল কোমল নয়নের জল
নয়নে উঠিবে ভাসি।
সে বিষাদ-নীরে নিবে যাবে ধীরে
প্রখর চপল হাসি।
উদাস নিশ্বাস আকুলি উঠিবে,
আশা-নিরাশায় পরান টুটিবে,
মরমের আলো কপোলে ফুটিবে,
শরম-অরুণ-রাগে।
-
রাগ: বিলাবল-কীর্তন
তাল: দাদরা
রচনাকাল (বঙ্গাব্দ): অগ্রহায়ণ, ১২৯৫
রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1888
রচনাস্থান: কলকাতা, দার্জিলিং
স্বরলিপিকার: ইন্দিরা দেবী,
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর